নিজস্ব প্রতিবেদক::
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ রোড এলাকায় ফার্মেসী ব্যবসার আড়ালে গড়ে উঠেছে এক সংঘবদ্ধ দালাল ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং তথাকথিত ফেসবুক লাইভারদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ উঠেছে “সুনামগঞ্জ ফার্মেসী” নামের এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওসমানী মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে কিছু দালাল রোগীর স্বজনদের প্রলোভন দেখিয়ে সুনামগঞ্জ ফার্মেসীতে নিয়ে আসে। প্রথমে কম দামে ওষুধ বিক্রির মাধ্যমে আস্থা অর্জন করা হয়, পরে গোপনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এতে বহু রোগীর স্বজন প্রতারিত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জ ফার্মেসীর মালিক সুমন শিকদার-এর বিরুদ্ধে। তিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং পূর্বে একটি হত্যা মামলার আসামি বলেও জানা গেছে। কারাভোগের পর স্থানীয় ব্যবসায়ী বিধান কুমার সাহার পরামর্শে তিনি ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার অধীনে কর্মরত আছেন ম্যানেজার কামরুল, সায়েম, বাপ্পি, জহির, মাজহারুল, জালাল, বাবলু-২, লাভলু, লিটন ও মানিকসহ প্রায় ১০–১৫ জন দালাল, যারা মেডিকেল কলেজের ভেতরে সক্রিয়ভাবে রোগীদের ফার্মেসীতে নিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন প্রতি দালালের নামে পুলিশের একটি অংশকে প্রায় তিন শত টাকা করে বখরা দেওয়া হয়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জ ফার্মেসীতে ওষুধের অতিরিক্ত মূল্য আদায় নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই সময় ফেসবুক লাইভার — মাছুম আহমদ, জালাল জয়, তুহিন আহমদ ও জাহাঙ্গীর আলম রাসেল — ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইভ প্রচার করেন। লাইভে ফার্মেসী কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কথা স্বীকার করে; তবে কিছুক্ষণ পর ঘটনাটি অন্য দিকে মোড় নেয়।
অভিযোগ রয়েছে, ফার্মেসীর মালিক সুমন শিকদার নিজের অপরাধ ধামাচাপা দিতে ওই লাইভারদের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রথমে ৩৬ হাজার টাকা দাবি করা হলেও শেষ পর্যন্ত ২৩ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। পরে “সাপ্তাহিক বাংলার মাটি” পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ফারুক আহমদ চৌধুরীর মাধ্যমে ওই অর্থ মাছুম আহমদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। বিনিময়ে লাইভাররা নিউজ না করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু দুই দিন পরই Bangladesh Online Media ও আরও কয়েকটি ফেসবুক পেজে ঘটনাটি বিকৃতভাবে প্রচারিত হয়, যেখানে সাংবাদিক ফারুক আহমদ চৌধুরী ও তার ছেলে আরমান আহমদকে অন্যায়ভাবে জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক আহমদ চৌধুরী বলেন, “আমার বা আমার ছেলের এই ঘটনায় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং আমি ঘটনাটি তদন্তের জন্য প্রেসক্লাব ও প্রশাসনকে অবহিত করেছি। যারা টাকা নিয়েছে, তারাই এখন অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে চাইছে।” তিনি আরও জানান, সুমন শিকদারের সঙ্গে তার শুধুমাত্র প্রতিবেশী সম্পর্ক ছিল, কোনো আর্থিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ ফার্মেসীর মালিক সুমন শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফেসবুক লাইভার মাছুম আহমদ প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে ভিডিও প্রকাশের পর তা মুছে দেওয়ার অনুরোধ জানান বলে কল রেকর্ডে উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসক্লাবের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, কিছু ব্যক্তি “ফেসবুক সাংবাদিক” পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে, যা প্রকৃত সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা প্রশাসনের কাছে এসব লাইভার ও ফার্মেসী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলেন, “ওসমানী মেডিকেল কলেজের আশেপাশে দালাল সিন্ডিকেট বহুদিন ধরে সক্রিয়। প্রশাসন চাইলে সহজেই তাদের চিহ্নিত করতে পারবে।” তারা হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের হয়রানি বন্ধে এলাকাটিতে নিয়মিত নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।
তদন্ত ছাড়াই এ ধরনের ঘটনা চাপা পড়ে গেলে ওসমানী মেডিকেল এলাকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে নৈরাজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এই অনিয়ম বন্ধ করে হাসপাতাল এলাকার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।
মন্তব্য করুন