মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আজ। ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালে তরুণদের হাত ধরে সংগঠিত অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম কোনো ভোটের আয়োজন হচ্ছে দেশে। তাই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব নির্বাচনের দিকে আজ দৃষ্টি থাকবে পুরো দেশের। ভোটের পরিবেশ, ফলাফল আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বড় বার্তা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ওদিকে দু’দিন আগেই ভোটের প্রচারণা শেষ হলেও শেষ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলেছে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণার লড়াই। নানা কৌশলে, নানা মাধ্যমে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা বার্তা দিয়েছেন ভোটারদের উদ্দেশ্যে। এ ছাড়া কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে তারা সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তাদের আইডি বন্ধ করে দেয়া বা রিচ কমে যাওয়ার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। ৩৮তম ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। আটটি কেন্দ্রে হবে এই ভোট। থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। অর্থাৎ সবমিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে ওএমআর শিটে। ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এসব শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে ব্রেইল পদ্ধতিতে (৩০ জন) ভোটদানের ব্যবস্থা। যারা ব্রেইল পড়তে পারেন না, তারা আরেকজনের সহযোগিতা নিয়ে অন্য সবার মতোই ভোট দিতে পারবেন।
এই নির্বাচনে মূলত ভিপি-জিএস পদ নিয়ে আগ্রহ বেশি। ভিপি পদে বড় নাম ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ’ আবিদুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র সাদিক কায়েম, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের উমামা ফাতেমা। এ ছাড়াও আলোচনায় আছেন বাগছাস সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’র আব্দুল কাদের, ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের বিন ইয়ামীন মোল্লা। শেষ মুহূর্তে চমক হতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন। জিএস পদে লড়াইটা হতে পারে মূলত ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের তানভীর বারী হামীম, ছাত্রশিবির সমর্থিত এসএম ফরহাদ, বাগছাস সমর্থিত আবু বাকের মজুমদারের বিরুদ্ধে। তিনজনই ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ। এই বিগ থ্রির বাইরে গিয়ে চমক দেখাতে পারেন ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’র ফাতেহা শারমিন এ্যানি।
গতকাল সকাল থেকে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডিতে ব্যাপক সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে আক্রান্ত হন ছাত্রদল মনোনীত ‘আবিদ-হামীম-মায়েদ পরিষদ’র ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এবং জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম। সকাল ১০টার দিকে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে যায়। পরে আপিলের প্রেক্ষিতে তাদের আইডি ফিরিয়ে আনা হয়। তবে এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদের আইডি এখনো ফেরত আসেনি।
গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবিদ বলেন, আমার আইডি ডিজেবল করা হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করেছি। জানি না ফেরত পাবো কিনা। আমাদের প্রচার কার্যক্রমের মূল মাধ্যম ছিল এসব আইডি। সেগুলো অনেক রিচ পাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, যারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সাইবার আক্রমণ করছে, শিক্ষার্থীরা আগামীকাল ব্যালটে তার জবাব দেবে।
জিএস প্রার্থী হামীম অভিযোগ করে বলেন, যারা আবিদ ভাই ও মেয়েদের আইডি ডিজেবল করেছে, তারা নির্বাচিত হলে চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর আইডিও ডিজেবল করে দেবে। আগে দেশপ্রেমিকদের গুম করা হতো, এখন দেশপ্রেমিকদের আইডিতে সাইবার আক্রমণ হচ্ছে। দুটোই সমান অপরাধ। তিনি শিবিরের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, গত ১৭ বছর যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে ছিল, তারাই এই অপরাধ করছে।
একই সময়ে শিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের আইডিও উধাও হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও কয়েকজন সম্পাদকীয় পদপ্রার্থীর আইডি রেস্ট্রিকটেড হয়ে যায়। জিএস প্রার্থী ফরহাদ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের আইডিতে বারবার সাইবার আক্রমণ হচ্ছে। কয়েকজনের আইডি সাসপেন্ড হয়েছে। কিছু আইডি বারবার লগআউট হচ্ছে। আল্লাহ সহায়। তিনি আরও দাবি করেন, তাদের গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী সাজ্জাদ হোসাইন খানের আইডিও সাসপেন্ড হয়েছে। সাংগঠনিক সূত্র জানায়, সাদিক, ফরহাদ, সাজ্জাদসহ কয়েকজন প্রার্থীর আইডি পরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ডিজেবল করা হয়েছে।বহাল থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় সময় আরও বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১ তারিখ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে লাইসেন্সধারী অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। ক্যাম্পাস পুরো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আপনার হাতের নাগালেই পাবেন। তাই অপরাধীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবেন। ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে, নিরাপত্তার ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে কোনো দুর্ঘটনা হবে না। সকলকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করছি।
উল্লেখ্য, সবশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। যাতে ভিপি হয়েছিলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নুরুল হক নুর এবং জিএস পদে জয় লাভ করেছিলেন বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী।
মন্তব্য করুন