গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলা ও সংঘাতের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জামায়াত ইসলামী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্টে জামায়াতের মিছিল পূর্ব এই সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করা হয়।
সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর না যেতেই গোপালগঞ্জে জুলাই বিপ্লবীদের উপর পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্টীর সশস্ত্র হামলায় জাতি উদ্বিগ্ন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের দলগুলোর মধ্যে বিভক্তির কারণে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী ফের সক্রিয় হওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
সমাবেশে বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথায় বলায় আজ একটি রাজনৈতিক দল জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে উস্কানিমুলক স্লোগান দিয়ে গায়ে পড়ে লাগার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি আপত্তিকর স্লোগানের মাধ্যমে পায়ে পা দিয়ে রাজনীতিতে সংঘাত সৃষ্টির পায়তারা চলছে। সিলেটের সহনশীল রাজনীতি বিনষ্টের ফল কারো জন্য মঙ্গলজনক হবে না। জামায়াত-শিবিরের পিছু হটার ইতিহাস নেই। আমরা হাসিমুখে ফাঁসির রশি পড়তে পারি, কারো রক্তচক্ষুকে পরোয়া করি না। সুতরাং আমাদেরকে নিয়ে কথায় কথায় ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর শেখানো- দেশ ছাড়ার স্লোগান বন্ধ করুন।
বৃহস্পতিবার সিলেটে মিছিল করে যুবদল। এই মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়। এরআগে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল থেকেও জামায়াতের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়।
বুধবার গোপালগঞ্জে সমাবেশ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন এনসিপি নেতারা। হামলা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত ও অঙষখ্য আহত হন।
এই হামলার প্রতিবাদে এবং ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত জামায়েতের মিছিলটি নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সমাপ্ত হয়।সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম আল মাদানী, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমূখ।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, বুধবার গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালিয়েছে। তারা এনসিপির নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের গাড়িতে হামলা করে এবং তাদের অবস্থানস্থল এসপি’র অফিসেও হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় এনসিপির বহু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী অপশক্তির সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জাতি ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ। অবিলম্বে তাদেরতে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তারা বলেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাৎরাচ্ছেন। জুলাই বিপ্লবীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই গোপালগঞ্জে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর তান্ডবে গোটা জাতি বিস্মিত, এটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য চরম হুমকি। তাই ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে রুখে দিতে দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হবার পাশাপাশি হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান থাকবে।
মন্তব্য করুন