ক্রাইম প্রতিবেদক :: চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের গডফাদার শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ। সিলেটে ছিনতাই, চুরি হওয়া সকল দামী মোবাইলের খরিদদার তিনি। আর এসব করছেন একটি ব্যবসায়িক সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। ব্যবসা করলেও তাকে এক নামে সিলেটের মানুষ চিনে তা হলো মোবাইল শহীদ। কোন মোবাইল ছিনতাই বা চুরি হলেই শহিদের নাম চলে আসে। তাদের ধারণা শহীদের কাছে গেলেই আপনার হারানো, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল পাওয়া যাবে।
শহীদ মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার সনকাঁপন গ্রামের বাসিন্দা মৃত নীল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমা থানার শীববাড়ী এলাকায় জমি কিনে আলিশান বাড়ী বানিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছন।
বিগত ১৫ বছর আগেও শহীদ সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী বাসটার্মিনাল এলাকায় তাহার বাবা নীল মিয়ার সাথে কলোনীতে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করতেন। জীবিকা নির্বাহ করতে নীল মিয়া কাজিরবাজার থেকে মাছ কিনে বাসায় বাসায় ফেরি করে বিক্রি করতো। তখন শহীদ পুলেরমোখ ও কদমতলীতে পলিতিন ফেরি করে বিক্রি করতো। পলিতিন বিক্রির পাশা-পাশি জড়িয়ে পরে মোবাইল চোর, ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের সাথে। রাতারাতি হয়ে যায় মোবাইল চোর,ছিনতাইকারীদের নেতা। তার নির্দেশে নগরীর দক্ষিণ সুরমা ও উত্তর সুরমায় গড়ে উঠে বিশাল বড় মোবাইল ছিনতাই চক্রের সিণ্ডিকেট।
বর্তমানে এই সিন্ডিকেটের পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহত্তর সিলেটের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন ছাড়িয়ে পাড়া মহল্লায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। এই চক্রের গডফাদার ও রাজা মোবাইল শহীদ। সে কয়েক বছরে আলাদিনের ছেরাগের মতো অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মাসে মাসে পালসার মোটরসাইকেল বদল করার কারনে পালসার শহীদ নামেও পরিচিত।
আরো খোজঁ নিয়ে জানাযায়, একসময় সিলেট নগরীর বন্দর বাজার এলাকার করিম উল্লাহ মার্কেটের তৃতীয় তলায় শহীদের একটি মোবাইল ফোনের দোকান ছিলো, কিন্তু তাহার অপকর্মের কারণে করিমউল্লাহ মার্কেটের বদনাম হওয়ায় ব্যবসায়ী সমিতি তাকে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। তিনি বর্তমানে করিমউল্লাহ মার্কেটে না থাকলেও ভারতীয় চোরাচালানের মোবাইলের বড় অংশ তাহার ইশারায় ঠিকই করিমউল্লাহ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও বন্দরবাজার এলাকার সিটি হাট মার্কেটে তার ভাইয়ের একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে। দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর এলাকায় তাহার ভাইয়ের বিকাশ,নগদ,উপায়ের লেনদেনসহ ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করছে, এছাড়াও সিলাম, জালাপুর ও গহরপুর বাজারে শহীদের মোবাইলের দোকান রয়েছে বলে বিশ্বস্থ একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। করিমউল্লাহ মার্কেটে মোবাইলের দোকান না থাকলেও শহীদের অবৈধ ভারতীয় চোরাই মোবাইলের রমরমা বাণিজ্য চলছে।
সিলেটের সীমান্গবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ , কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পার হয়ে ভারতীয় চোরাচালানের মোবাইল আসে শহিদের কাছে। আর একই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের যতো দামী চুরি, ছিনতাইয়ের মোবাইল আছে তা ভারতে পাচার হয় শহীদের মাধ্যমে। পাচারের আগে মোবাইলে দেওয়া হয় ফ্ল্যাশ, পরিবর্তন করা হয় আইএমইআই নম্বর। চোরাই মোবাইল হস্তান্তর হয় পারাইরচক প্রগতি পেট্টোল পাম্পের সামনে। শহীদের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালীসহ বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি,চোরাচালানসহ ৯টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানাযায়।
প্রশাসন, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে শহীদের রয়েছে হটলাইন সম্পর্ক। অপরিচিত কোন ব্যাক্তি শহীদের মুঠোফোনে কল করলে, ১০ মিনিটের মধ্যে ফিরতি কল আসে প্রশাসন ও সাংবাদিক পরিচয়ে, কখনও RAB কখনো ডিবি পুলিশ কখনোবা সাংবাদিক।
এস আই পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে সরাসরি আলাপ হলে তিনি দূ:খের সাথে এই প্রতিবেদককে বলেন, মোবাইল শহীদ বা মহিলা ছিনতাই কারী পপিকে আটক বা গ্রেফতার করে কোন লাভ নেই বরং লস। এদের হাত অনেক লম্বা, যে পুলিশ তাদের আটক বা গ্রেফতার করবে সেই পুলিশ এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেট থেকে বদলী হয়ে যাবে। তাই কোন পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে সাহস করেনা।
নগরীর বাসটার্মিনাল, কদমতলী, রেলওয়ে স্টেশন , হুমায়ুন চত্ত্বর, বন্দরবাজার,,সুরমা মাকেট, তালতলা, জিন্দাবাজার,আম্বরখানা, টিলাগড়, টুকের বাজার, বিমানবন্দর, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কাজিরবাজার, মহাজনপট্টি, কাস্টঘর, মেজরটিলা, চন্ডীপুল, ইলেকট্টিক সাপ্লাই,পাঠানটুলা রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ফাঁকা রাস্তা, অফিস-আদালত, কমিউনিটি সেন্টার এমনকি বাসাবাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই বা চুরি হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকায় অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন।
মোবাইল শহীদ প্রতিদিন রাতে স্থানীয় গুন্ডা, সাংবাদিক, প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীর সোর্সকে বখরা দেয় বলে এক প্রত্যেক্ষধর্শী জানিয়েছেন।
শহীদের অপকর্মের বিষয়ে জানতে এসএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া') বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন মোবাইল কত পার্সেন্ট উদ্ধার হচ্ছে সেটা বলা যাবেনা,তবে মোবাইল সচল থাকলে শতভাগ আমরা উদ্ধার করতে পারবো। মূল বিষয় হচ্ছে চুরি বা ছিনতাইয়ের মোবাইল ফ্লাশ দেওয়া,বন্ধ রাখা, এমন কি পরিবর্তন করা হয় আইএমইআই নম্বর। যার কারণে মোবাইল উদ্ধার করতে দেরী হয়।দামী মোবাইল হলে দেশের বাহিরে পাচার করা হয়। তিনি আরো বলেন মোবাইল শহীদ ও ছিনতাইকারী পপির বিষয়ে তথ্যদিন দেখবো তাদের হাত কতো লম্বা।
এসব বিষয়ে জানতে মোবাইল শহীদের মুঠোফোনে কল করলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন