জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সিলেট বাংলার পক্ষে অবস্থান নিলেও সিলেটের পুরো অংশ বাংলায় যুক্ত হয়নি। বরং সিলেটের বহু অংশ আসামের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান এবং আওয়ামী লীগ আমলেও সিলেট বঞ্চিত হয়েছে। সিলেটের গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ থেকেও সিলেটবাসী ঠকেছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটে 'জুলাই পদযাত্রা' শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেটের প্রবাসীদের অবদানের কথা স্বীকার করে নাহিদ বলেন, 'সিলেটের প্রবাসীরা গণঅভ্যুত্থানে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা তাদের ভুলবো না। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' ও 'জুলাই সনদ' আদায় করে নেওয়া হবে।'
সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, 'এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসীদের দল নয়। এটি সংকট থেকে উঠে আসা একটি দল, যা ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে এবং আওয়ামী লীগের অধ্যায় শেষ করে জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।'
হাসনাত বলেন, 'এতোদিন দেশ ছিল বসুন্ধরার, প্রশাসনের, আর্মিদের। জনতার হয়ে দেশ কাজ করেনি। এনসিপির নেতৃত্বে সেই ক্ষমতা জনতার হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সংকট এখনো কাটেনি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তারা আবার ক্ষমতায় ফিরতে না পারলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। চাঁদাবাজ ও দখলদাররা বাংলার মাটিতে থাকতে পারবে না।'
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি, অর্পিতা শ্যাম দেব প্রমুখ।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে এনসিপির পদযাত্রা শুরু হয়। এতে অংশ নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সিলেটের হাজারো নেতাকর্মী এই পদযাত্রায় অংশ নেন।
'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ', 'ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা', এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ।
সিলেটে আসার পথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা এতদিন গোলামের জীবন যাপন করেছি। বিশেষ করে হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের মাধ্যমে আমরা শপথ নিয়েছি, আর গোলামী নয়।'
তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দ্রুত দিতে হবে। হলগুলোতে খাবারের মান নিশ্চিত করতে হবে। লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই থাকতে হবে এবং একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।'
নাহিদ আরও বলেন, 'এই এক বছরে আমাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয়নি। তবে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক কিছু সংস্কার হচ্ছে।'
এর আগে, শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জে 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' করে এনসিপি। শহরের আলফাত স্কয়ারে এক পথসভায় নাহিদ বলেন, 'ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র মেরামতের জন্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছে। নতুন বাংলাদেশ এবং নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। শেখ হাসিনা আমাদের উপর ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র চাপিয়ে দিয়ে গেছেন।'
পদযাত্রায় অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই সুনামগঞ্জ পৌঁছান এনসিপি নেতারা। শুক্রবার সকালে জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। জুমার নামাজ আদায় শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে আলফাত স্কয়ার পর্যন্ত পদযাত্রা করেন নেতারা।
আলফাত স্কয়ারের পথসভায় নাহিদ বলেন, 'সুনামগঞ্জকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। মুজিববাদ নানা ছলেবলে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তবে বাংলাদেশে মুজিববাদের রাজনীতি চলবে না। এর বিরুদ্ধে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মুজিববাদ মানে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, লুটপাট, দুর্নীতি, ইসলামবিদ্বেষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল, এবং ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বর্গা দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষার জন্য মুজিববাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।'
মন্তব্য করুন