বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের সম্ভাবনা নেই। সরকারের লক্ষ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা। বাসাবাড়িতে এলপিজি গ্যাসই ব্যবহার করতে হবে। শুক্রবার সকালে সিলেট গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমছে, নতুন করে উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট তাই গ্যাস আমদানি বাড়ছে। সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।সিলেটের গ্যাস উৎপাদন ও পাথর কোয়ারিগুলোতে খনিজ সম্পদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুক্রবার সকালে দুইদিনের সফরে সিলেটে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সিলেটে নেমেই চলে যান সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে। সেখানে নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া কৈলাশটিলা-৭ কূপটি পরিদর্শন করেন। পরে সেখান থেকে চলে যান এমএসটিই প্লান্টে। সেখানে বসেই এ অঞ্চলের গ্যাস উৎপাদনে নেয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নানা খোঁজখবর নেন তিনি। ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্থাপনা।
পরিদর্শন শেষে জ্বালানি উপদেষ্টা দেশের জ্বালানি সীমাবদ্ধতা ও নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি মূলত গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের বেশ কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ হচ্ছে। পুরাতন কূপগুলোর ওয়ার্কওভার এবং নতুন কূপ খনন হচ্ছে সেগুলো দেখতে।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, প্রতিবছর গ্যাসের উৎপাদন কমছে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা যুক্ত করতে পারছি। সেই ঘাটতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ছে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে কিভাবে আমদানি কমানো যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে ভোলা ও জামালপুরে নতুন কূপ খনন হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চলমান রয়েছে। আমরা কূপ খননের জন্য নতুন একটি রিগ ক্রয় করছি, একটি রিগ দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না এছাড়া নতুন রিগগুলো অত্যাধুনিক মানের। ইতিমধ্যেই ডিপিডি তৈরি হয়েছে দ্রুতই তা ক্রয় করা হবে।
গত এক মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ কূপ হতে ৮ মিলিয়ন করে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। নতুন এই ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন উপদেষ্টা।
আবাসিকে নতুন গ্যাস দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে- ফাওজুল কবির খান বলেন, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও সম্ভাবনা নেই। আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো, তাহলে আমি ঢাকা শহরেও আবাসিকে গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম। কারণ এ আবাসিক গ্যাস সরবরাহ সবচেয়ে ইনইফিসিয়েন্ট, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস মিলছে না, শিল্প কারখানায় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ অপচয় মনে করি। বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহের যে খরচ তার তুলনায় যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায় তার মধ্যে বিস্তর ফারাক।
যেসব এলাকায় গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে সেসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগের যে দাবি করছেন তাও নাকচ করেন তিনি বলেন, যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে সেসব এলাকায় আমরা স্বল্পমূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার দিচ্ছি। বাজারে যেখানে এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য ১৪০০ টাকা সেখানে এসব এলাকায় ৮০০ টাকায় দেবে সরকার।তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সচেতনতা তৈরি করুন, আর বাসা বাড়িতে গ্যাস কেউ পাবেন না। এলপিজি এসে গেছে, আমরা দামও কমানোর চেষ্টা করছি। এখন থেকে বাসা বাড়িতে এলপিজি, শিল্পকারখানায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
পরে বিকাল সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিলেট-১০ কূপসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন তিনি। শনিবার সিলেটের জাফলং ও ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করবেন বিদ্যুৎ জ্বালানি উপদেষ্টা।
মন্তব্য করুন