নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ::হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। টানা সাড়ে চার ঘণ্টার ওই সংঘর্ষে একজন নিহত হন এবং দেড় শতাধিক লোক আহত হন। এসময় অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অন্তত ১০টি দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি।
নিহত ব্যক্তির নাম ফারুক মিয়া (৪২)। তিনি পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের আওল মিয়ার ছেলে ও পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত প্রায় ২০ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরচু তালুকদার ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আশাহিদ আলী আশার মধ্যে কথাকাটাকাটি থেকে। এরপর শুক্রবার রাতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে সোমবার দুপুরে নবীগঞ্জ শহরের মধ্যবাজার, শেরপুর রোড ও হাসপাতাল সড়কজুড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ।
তিমিরপুর ও চরগাঁও গ্রামের লোকজন শহরে অবস্থান নিতে গেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের আনমনু, রাজাবাদ, রাজনগর, কানাইপুর, নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এতে নবীগঞ্জ শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
সংঘাত চলাকালে শহরের ইউনাইটেড প্রাইভেট হাসপাতাল, হোটেল, দোকানপাটসহ অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয় এবং অন্তত ১০টি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেল ৪টায় নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেন। এতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত শহর ও আশপাশের এলাকায় জনসমাবেশ, মিছিল, জমায়েত, অস্ত্র বহন এবং সংঘাতমূলক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে ১৪৪ ধারা কার্যকর হওয়ার পরও সংঘর্ষ চলতে থাকে। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ মাঠে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মন্তব্য করুন