শাহান আহমেদ চৌধুরী ::
সিলেট মহানগরীর বালুচর এলাকা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে কিশোরগ্যাংয়ের অভয়ারণ্যে। নিয়ন্ত্রণহীন গ্যাং সংস্কৃতি, অস্ত্রের ঝলকানি ও প্রকাশ্য মহড়ায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলছেন, "বালুচর এখন শুধু একটি এলাকা নয়, এটি নগরীর আতঙ্কের প্রতীক।" নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করছেন হাজারো বাসিন্দা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোরগ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। দলগুলো বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের প্রভাব জাহিরে লিপ্ত, যা দিন দিন সংঘর্ষ ও সহিংসতায় মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, যাহা বিগত কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণিত।
অভিযোগ রয়েছে, গ্যাং সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও বহন করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর স্থানীয় অলিগলি, টিলা ও নির্জন এলাকায় তাদের প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা যায়, এমন কি দিনের বেলায়ও। অস্ত্র হাতে ভয় দেখিয়ে তারা এলাকায় প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নিতে প্রশাসনকে তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে না। গত ২২ নভেম্বর বিকাল ৩ ঘটিকার সময় একটি গ্রুপের কিশোরগ্যাং সদস্যরা আরামবাগ এলাকার একটি টিলায় প্রকাশ্যে রামদা হাতে মহড়া দেয়।
কিশোরগ্যাংয়ের দাপটে সাধারণ মানুষ নীরব হয়ে পড়েছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কেউ গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, "থানার কাছে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি, উল্টো ভয়ে থাকতে হয়।" ফলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এখন দিশেহারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, "আমরা ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নই। ছেলেপুলা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে, আর পুলিশ শুধু দেখে। এভাবে চলতে থাকলে আরো খুনের ঘটনা খারাবি ঘটবে।"যাহা এলাকাবাসীকে চোখের সামনে নীরবে দেখতে হবে।
এব্যপারে ৩৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী
সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবর'র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন সিলেটে কিশোরগ্যাং এর ডেঞ্জারজোন হিসেবে পরিচত বালুচরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা জরুরী। তানাহলে কেউ নিরাপদ নয়। সর্বক্ষণ বালুচরের মানুষ অজানা আতংকে ভোগে। তিনি সিসি ক্যামেরা লাগানোর উপরও জোরদেন।
আরামবাগ পাড়া কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আরামবাগ স্থানীয়রা জড়িত নয়, তবে বহিরাগতরা এসব কর্মকান্ডে জড়িত।
এ ঘটনায় সুশীল সমাজ ও নগরবাসীর পক্ষ থেকে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান এবং কিশোরগ্যাং দমন কার্যক্রম জোরদার করার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে অভিভাবক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদেরও কিশোর অপরাধ ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কিশোরগ্যাং এর আস্তানা গুলো হচ্ছে:- জোনাকি ' বালুচর ২নং মসজিদ ' বালুচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামনে ' সোনার বাংলা ' আমারবাগ ৩নং গলি : আরামবাগ টিলার উপর।
উল্লেখ্য এর আগে সিলেটের বালুচরে ১০ নভেম্বর ২ নম্বর মসজিদ গলিতে অপরাধ জোন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘবদ্ধ হামলায় বুলেট মামুনের ভাই ফাহিম আহমদ ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন এবং ১২ নভেম্বর ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে ফাহিম ঘাতকদের নাম জানান; যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, প্রধান অভিযুক্ত ‘মাইল্লা’সহ আরও কয়েকজনের নাম উঠে আসে।
এর আগে বালুচরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরিফ হত্যাকাণ্ডের দায়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা হিরণ মাহমুদ নীপু আলোচনায় আসেন; কিছুদিন জেল খেটে পরে আবারও পলাতক হন, বর্তমানে এলাকায় তিনি নেই এবং নিয়ন্ত্রণও হাত বদল হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ– কিশোর গ্যাং ও মাদক সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়, পুলিশের সঙ্গে অপরাধীদের সখ্যতা ও আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রমে ঢিলেমি রয়েছে। এ ঘটনায় ফাহিমের বাবা মো. হারুন রশীদ শাহপরান থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরোও ৭–৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ইকোপার্ক এলাকা থেকে ‘সবুজ আহমদ রেহান’ নামে এক আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয়রা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দারা সভা করেছেন এবং জোনাকী এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধে ‘ঐক্য পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে। সাংবাদিক বদরুর রহমান বাবরের আহ্বানে বৈঠক করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে নামার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে এলাকাবাসী জানান।
মন্তব্য করুন