নিজস্ব প্রতিবেদক সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের ছাতকে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা না থাকায় গত তিন বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার। এই দায়িত্বের সুযোগ নিয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াই ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ‘উপজেলা রিসোর্স পুলের মডিউল-১’ শীর্ষক এসবিসিসি প্রশিক্ষণের নামে ছাতকসহ জেলার ১২টি উপজেলায় ভুয়া প্রশিক্ষণ দেখিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জাল করে অর্থ উত্তোলন করা হয়। শুধু ছাতক উপজেলা থেকেই তিনি উত্তোলন করেছেন ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, যা স্বাস্থ্য সহকারীদের নামে সম্মানির বাবদ দেখানো হয়েছে। অথচ ভুক্তভোগীরা জানেনই না এমন কোনো প্রশিক্ষণের কথা। অনেক স্বাস্থ্য সহকারী ইতোমধ্যে অবসর (পিআরএল) গ্রহণ করলেও তাদের নামেও সম্মানি তুলে নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৬ ও ৭ নভেম্বর ছাতক উপজেলায় এসবিসিসি প্রশিক্ষণের নামে একটি ভুয়া বিল-ভাউচার সম্প্রতি গণমাধ্যমের হাতে আসে। এতে প্রশিক্ষণের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে ছাতকের ইউএনও মো. তরিকুল ইসলামের নাম ও সম্মানি ৭ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়। অথচ তিনি ছাতকে যোগ দেন ওই প্রশিক্ষণের ৪ দিন পর, ১১ নভেম্বর।
এছাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিনের নামেও ৪ হাজার টাকা সম্মানি দেখানো হয়েছে। তিনিও ছাতকে যোগদান করেন ৩০ ডিসেম্বর, অর্থাৎ প্রশিক্ষণের ১ মাস ২৩ দিন পর। ভাউচারে দেখা যায়, এজেএম রেজাউল আলম নিজেই প্রশিক্ষক হিসেবে ১০ হাজার এবং সঞ্চালক হিসেবে আরও ৬ হাজার টাকার সম্মানি নিয়েছেন। এই একই অনুষ্টানে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শহীদুল ইসলামের নামেও ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
পুরো ঘটনায় শুধু ছাতকেই ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই কায়দায় জেলার ১২টি উপজেলায় এমন গায়েবি প্রশিক্ষণ দেখিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা যায়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। যদিও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এজেএম রেজাউল আলম বলেন, "প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং সবাইকে সম্মানিও দেওয়া হয়েছে।" প্রশিক্ষণের ছবি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং পরে জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন, সুস্থ হয়ে অফিসে ফিরে বিস্তারিত বলবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন বলেন, “আমি ৩০ ডিসেম্বর ছাতকে যোগ দিয়েছি। আমার যোগদানের ১ মাস ২৩ দিন আগের প্রশিক্ষণে আমি কীভাবে অংশ নেব? অনেক স্বাস্থ্যকর্মীও জানিয়েছেন, তাদের নামেও সম্মানি উত্তোলন হয়েছে, অথচ তারা কিছুই পাননি।”
ছাতকের ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমি ১১ নভেম্বর ছাতকে যোগ দিয়েছি, ৬ ও ৭ নভেম্বর তো আমি ছাতকে ছিলামই না। আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলা হয়েছে, এটা খুবই বিস্ময়কর।”
সিলেট বিভাগীয় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, “প্রত্যেক উপজেলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা থাকলেও ছাতকে না হওয়াটা বিস্ময়কর। একজন ব্যক্তি একই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ও সঞ্চালক হিসেবে আলাদা সম্মানি নিতে পারেন না। এছাড়া, ইউএনও থেকে বেশি সম্মানি পাওয়াও অনুচিত।
মন্তব্য করুন