অকৃত্রিম ভালোবাসায় জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠা খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানাল লাখ লাখ মানুষ।অসীম অনন্ত লোকে পাড়ি জমানোর সময় কোটি মানুষের ভালোবাসা সঙ্গী করে নিয়ে গেলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
জানাজায় অংশ নেওয়া বহু মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।অনেকে হাউমাউ করে কেঁদেছেন।কেউবা নিরবে চোখের পানি মুছেছেন।শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে অনন্ত পথের যাত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর আকাশ আজ ভারি হয়ে উঠে।দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একজন খাঁটি দেশপ্রেমিককে চোখের পানিতে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া আপসহীন এই নেত্রীর চিরপ্রস্থানে শোকে মুহ্যমান পুরো জাতি।৪১ বছর বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালনকালে বহুবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে তার চেয়ে বেশি পরীক্ষা আর কাউকে দিতে হয়নি।নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন- তবুও দেশ ছাড়েননি।সর্বংসহা এই মানুষটির শেষ জীবনটাও কেটেছে ফ্যাসিবাদী শাসনের অমানসিক নির্যাতনের যাতাকালে।
শেষ জীবনে সঙ্গী করে নিয়ে গেলেন এদেশের মানুষের ভালোবাসা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জানাজায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা তিনটার পরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকারর জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।
জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশের এলাকাজুড়ে লাখ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নেন। নির্ধারিত স্থানে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ আদায় করেন।
জানাজায় অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর ১২টার পরে খালেদা জিয়ার মরদেহ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পৌঁছায়। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে তার জানাজাস্থলে নেওয়া হয়।
জানাজা অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
জানাজার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনীত রাজনীতিবিদরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
দাফনকাজ নির্বিঘ্নে শেষ করতে সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় এসেছেন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি।
মন্তব্য করুন