অজিত কুমার দাশ,ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ-৫ আসন—শিল্পনগরী ছাতক ও সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার নিয়ে গঠিত—বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে পালাবদল ঘটেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। তবে এবারের নির্বাচন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজপথে সক্রিয় ও মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয় কয়েকজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোটযুদ্ধ রূপ নিচ্ছে উত্তপ্ত লড়াইয়ে।
আলোচনার কেন্দ্রে বিএনপির দুই প্রার্থী,বর্তমানে ভোটারদের আলোচনা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে কেন্দ্রে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, যিনি এর আগে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর পাশাপাশি রয়েছেন একই কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা স্পষ্ট। স্থানীয় পর্যায়ে গুঞ্জন রয়েছে, একজন মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মাঠে থাকতে পারেন।
জামায়াতের পুরোনো ঘাঁটিতে সক্রিয়তা,বিএনপির ঐতিহ্যবাহী ঘাঁটিতে অবস্থান নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামি। দলটির স্থানীয় প্রার্থী ছাতকের মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানী ইতিমধ্যেই গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে দলটির মাঠপর্যায়ের তৎপরতা অনেকটাই দৃশ্যমান।
তরুণদের পছন্দের নতুন মুখ: সাদিক সালীম
এদিকে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যতিক্রমী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মাওলানা সাদিক সালীম। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত রিকশা মার্কার প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে শুরু করা তাঁর যাত্রা বর্তমানে ইসলামি অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য একটি নেতৃত্বে রূপ নিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ভবিষ্যতের ইসলামি রাজনৈতিক জোটে তিনিই নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অন্যান্য ইসলামি প্রার্থী ও স্বতন্ত্র অংশগ্রহণে
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ছাতক উপজেলার সহ-সেক্রেটারি মাওলানা আলী আকবর।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে লন্ডনপ্রবাসী কমিউনিটি নেতা মাওলানা লুৎফর রহমান বিননুরী প্রার্থী হয়েছেন।
খেলাফত মজলিস থেকে প্রবাসী নেতা মাওলানা আব্দুল কাদির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ছাতকের জাহাঙ্গীর আলম, যিনি জাবা মেডিকেল সেন্টারের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
নিষ্ক্রিয় নতুন রাজনৈতিক দলগুলো,গণ-অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি কিংবা এনসিপি-র কোনো নেতাকে এখনও পর্যন্ত মাঠে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে, এসব নতুন রাজনৈতিক দল ছাতক ও দোয়ারাবাজার এলাকায় সাংগঠনিকভাবে কার্যত অনুপস্থিত।
ভোটারদের প্রত্যাশা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা,স্থানীয় ভোটারদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে এবার তাঁরা সৎ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চান। তরুণ ভোটাররা বিশেষভাবে সচেতন—দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু কিংবা অপরাধে জড়িত কাউকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে যেমন প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে, তেমনি ভোটারদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে অভূতপূর্ব সচেতনতা ও আগ্রহ—যা আসনটিকে পরিণত করেছে দেশের অন্যতম আলোচিত নির্বাচনী কেন্দ্রবিন্দুতে।
মন্তব্য করুন