ইউরোপে উন্নত জীবনের স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাতৃভূমি ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি সুনামগঞ্জের দুই যুবকের। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে প্রথমে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়াতে। লিবিয়া থেকে ছোট্ট একটি নৌকায় করে ৪০ জন বাংলাদেশি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশ গ্রিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তারা।পথিমধ্যে খাদ্যের অভাব, পরিধানের জন্য হালকা কাপড়-চোপড় এসব নিয়ে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়, ভয়াবহ একটি ট্র্যাজেডির শিকার হন সবাই। আর এমতাবস্থায় তীব্র শীত, ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পানি ভেবে ভুলবশত পেট্রোল পান করায় অসুস্থ হয়ে পড়লে পরবর্তীতে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুই বাংলাদেশি তরুণ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বলছিলাম শাকিব আহমেদ শুভ ও সায়েম আহমেদের কথা। তারা দুজনই সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার সন্তান। শাকিব আহমেদ শুভ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আব্দুস মিয়ার ছেলে এবং সায়েম আহমেদ একই জেলার জিতু উল্লাহর ছেলে।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর লিবিয়া থেকে একটি ছোট প্লাস্টিকের নৌকায় করে প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি গ্রিসের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ঝুঁকিপূর্ণ ওই নৌযাত্রায় কোনো পর্যাপ্ত খাবার বা পানীয় ছিল না। যাত্রাপথে মাঝ সমুদ্রে নৌকাটিতে ছিদ্র হয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। টানা দুই দিন ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন যাত্রীরা। চরম দুর্ভোগের একপর্যায়ে বোতলে রাখা পেট্রোলকে পানি ভেবে পান করেন কয়েকজন। এতে তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অনেকেই অচেতন হয়ে যান। পরবর্তীতে গ্রিসের কোস্টগার্ড ও স্থানীয় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে এথেন্সের এক্সার্খিয়া এলাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। বিষয়টি জানার পর গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব রাবেয়া বেগম হাসপাতালে গিয়ে আহত বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেন।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পেট্রোল পান করার ফলে বেশির ভাগ রোগীর পাকস্থলী ও শ্বাসযন্ত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিয়েছে। তীব্র শীত, পানিশূন্যতা ও হাইপোথার্মিয়ার কারণে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে ওঠে। পেট্রোল পান করার কারণেই দুই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গুরুতর অবস্থায় থাকা চারজনের মধ্যে একজন কিডনি জটিলতায় ডায়ালাইসিসের আওতায় রয়েছেন। অন্যদের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।
চিকিৎসা শেষে গ্রিসের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী উদ্ধারপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের মালাকাসা শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।