
মো. আল আমিন
মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর বাজারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শতবর্ষী ঐতিহাসিক পুকুরটি দীর্ঘদিনের অবহেলা, অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও চারপাশ দখলের কারণে বিলুপ্তির পথে। প্রায় এক একর ৯৬ শতক আয়তনের এই পুকুরটি বর্তমানে কচুরিপানায় ভরাট হয়ে আছে। চারপাশে জমে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, আর দখলদারদের স্থাপনায় পরিবেষ্টিত হয়ে পুকুরটি দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এতে পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও পুকুরটির স্থায়ী সংস্কার, পুনর্গঠন বা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জমিদার আমলের ঐতিহ্য
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী, একসময় মধ্যনগর এলাকা জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৮৫ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিলে জমিদার তাঁর প্রজাদের সুবিধার্থে এই পুকুরটি খনন করেন। পুকুরটির মাটি দিয়েই পরে গড়ে ওঠে বর্তমান মধ্যনগর বাজার। সে সময় পুকুরটির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুজন পাহারাদারও নিয়োগ করেছিলেন।
একসময় পুকুরের পানি স্থানীয়দের পানীয়, অজু, গোসল, রান্নাসহ দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। প্রায় তিন দশক আগে সংস্কারের অভাবে পুকুরটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এমনকি শুকনা মৌসুমে উব্দাখালী নদী শুকিয়ে গেলে বাজার এলাকায় আগুন লাগার সময় কয়েকবার এই পুকুরের পানিই স্থানীয়দের রক্ষা করেছিল।
স্থানীয়দের উদ্বেগ ও দাবি
মধ্যনগর বি.পি. উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম জিলানী বলেন,
“মধ্যনগর বাজারের শতবর্ষী ঐতিহ্যের অংশ এই পুকুরটি। অবহেলা ও দখলের কারণে এটি হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পুকুরটি সংস্কার করে চারপাশে ওয়াকওয়ে অথবা শিশুদের জন্য মিনি পার্ক তৈরি করা—এটি এখন সময়ের দাবি।”
বাজার কমিটির সভাপতি আবুল বাশার বলেন,
“পুকুরটির বয়স শত বছরেরও বেশি। এর চারপাশ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার করা গেলে আগের সৌন্দর্য ফিরে আসবে।”
মধ্যনগর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনু বলেন,
“শৈশব থেকেই পুকুরটিকে দেখে আসছি। এখন এটি দখল ও ভরাট হয়ে বিলীন হওয়ার পথে। পুকুরটি দখলমুক্ত ও সংস্কার করা গেলে আগের মতো সৌন্দর্য ফিরে আসবে।”
প্রশাসনের আশ্বাস
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন,
“শতবর্ষী পুকুরটি দখলমুক্ত করে পুনর্গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা মনে করেন, যথাযথ উদ্যোগ ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটি শুধু ইতিহাসই নয়, বরং মধ্যনগর বাজারের সৌন্দর্যও পুনরুদ্ধার হবে।