মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
ঝুপড়ি ঘরের টিনের চাল ফুঁড়ে যখন বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে, তখনও বইয়ের পাতায় চোখ রাখে ফারজানা আক্তার আঁখি। আলো-আঁধারের জীবনে বড় স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে চলা এই কিশোরীর একটাই লক্ষ্য—একদিন ডাক্তার হয়ে গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করা।
ফারজানার বাবা জামাল মিয়া পেশায় দিনমজুর। ভোরে কাজের সন্ধানে বের হয়ে যান আর সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসেন। তবু মেয়ের পড়াশোনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। জামাল মিয়া বললেন,
“আমি গরিব মানুষ, কিন্তু মেয়ের সাফল্য আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। ফারজানার স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়—এই চাই।”
মহিষখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেছে। তার এ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক এমনকি পুরো গ্রাম গর্বিত। তবে এর পেছনে লুকিয়ে আছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের এক নিরব যুদ্ধ।
এই যুদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছে মধ্যনগর উপজেলা প্রেসক্লাব। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ফারজানাকে নগদ অর্থ ও উপহার দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তার পড়াশোনার দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন তারা। প্রেসক্লাব সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিজবাহ বলেন,
“ফারজানার মতো মেধাবীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে পারা আমাদের জন্য গর্ব। একদিন সে সমাজের কল্যাণে বড় ভূমিকা রাখবে।”
উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের ছাতারগড় গ্রামের এই মেধাবী কন্যার গল্প এখন ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। শুধু মধ্যনগর নয়, সারা সুনামগঞ্জ জুড়েই বইছে শুভকামনার বার্তা।
ফারজানার চোখে আজও জ্বলজ্বল করছে স্বপ্নের আলো। হয়তো সামর্থ্য সীমিত, কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মানুষের সহমর্মিতা তাকে নিয়ে যাবে অনেক দূর।