বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, চাল আমদানি এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কারণে বর্তমানে বাজারে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তিন ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
তিনি বলেন, প্রথমত সরকার চাল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে- এতে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ক্রেতা কমলে জিনিষের দাম কমার সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয়ত, আমরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে গুদাম থেকে ছাড়া শুরু করেছি- এতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তৃতীয়ত হচ্ছে- আমরা প্রাইভেট ইমপোর্টারদের বিদেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এসব কর্মসূচির কারণে চালের বাজারে ক্রেতা কমেছে এবং খুব তাড়াতাড়ি দামও কমে আসবে। বর্তমানে বাজারে চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে দিনাজপুর সার্কিট হাউসে চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বিষয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে ৫৫ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকা মূল্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। গত ১৭ আগস্ট থেকে এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সরকার চালু করা হয়েছে, যা চলবে আগামী ৬ মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে শুধুমাত্র রংপুর অঞ্চলেই সাড়ে ৯ লাখ পরিবারকে এ চাল দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও বৃদ্ধি করা হবে।
খাদ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, যারা লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে খাদ্যশস্য মজুত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি সরকারের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকে তাদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি এবং হবেও না।
রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলকে দেশের খাদ্যভাণ্ডার উল্লেখ করে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এবার বোরো মৌসুমে স্মরণকালের সর্বোচ্চ খাদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই দিনাজপুর জেলাতেও লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা চাল আমদানির জন্য দরখাস্ত করেছিল, তাদের কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও কেউ যদি আমদানি করতে চায়, চাহিদা অনুযায়ী আমরা আরও আমদানিকারককে অনুমতি দিতে পারব। ইতোমধ্যে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত কয়েক দিন বেশ কয়েক ট্রাক চাল আমদানি হয়েছে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যই চাল আমদানির এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার সরকারি চাল তেঁতুলিয়ায় উদ্ধার হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার চাল তেঁতুলিয়ায় উদ্ধারের ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতেও মানুষের খাদ্য দিয়ে কেউ যদি অনিয়মের আশ্রয় নেয়-তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।বর্তমানে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উল্লেখ করে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, প্রতি কেজি চালে সরকার ২০ থেকে ৩০ টাকা ভর্তুকি দেয়। গত বছরের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বেশি দিয়ে এবার ধান ও চাল কিনেছি। কারণ কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকদের কিছুটা লাভও করতে হয়। সুতরাং চালের দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে এখন পর্যন্ত সহনশীল পর্যায়ে আছে। ভবিষ্যতেও যাতে সহনশীল থাকে, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবির, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন, দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরীসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলার