দুপুরটা ছিল একদমই সাধারণ। রাজধানীর উত্তরার আকাশে তখনো রোদের আলো ঝলমলে। হঠাৎই আকাশ চিরে বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে একটি যুদ্ধবিমান। মুহূর্তেই চারপাশে আতঙ্ক, ধোঁয়া, আর ছুটোছুটি।
কিন্তু সেই বিকট শব্দের ভেতরেই চিরতরে থেমে যায় এক তরুণ পাইলটের জীবনের সব গান।
তার নাম তৌকির ইসলাম সাগর। বয়স ২৭-এর কাছাকাছি। মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। নতুন জীবনের পথে পা রেখেছিলেন সদ্য। আর এখন, তার স্ত্রী, বাবা, মা ও ছোট বোন শুধু শুনছেন—‘সাগর আর ফিরবে না।’
রাজশাহীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া বাসায় এখন চলছে শোকের মাতম। পাইলট সাগরের বাবার নাম তোহরুল ইসলাম। মা সালেহা খাতুন, আর ছোট বোন বৃষ্টি—তারা কেউ কথা বলতে পারছেন না।
সোমবার দুপুরে বাড়িতে যখন খবর পৌঁছায়, তখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে তাদের ঢাকায় নেওয়া হয়—সন্তানের মরদেহ গ্রহণের জন্য।
চাচা মতিউর রহমান গনমাধ্যমকে জানান, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। আমরা ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত এমন একটা দুঃসংবাদ আসবে। সাগর ছয় মাস আগে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন আগেই সে রাজশাহী এসেছিল। হাসিখুশি ছেলে, স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার।’
চাচা মতিউর রহমান জানান, ‘আমার ছোট ভাই মরদেহ আনতে ঢাকায় গেছেন। ওরা ফিরে আসার পর আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব—সাগরের দাফন রাজশাহীতে হবে, না চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায়।’
পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর বিমানবাহিনীর তরুণ অফিসারদের মধ্যে একজন প্রতিশ্রুতিশীল নাম। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি শুধু দেশের সামরিক ইতিহাসেই নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দাগ কেটে গেল।
সোমবার, ২১ জুলাই দুপুর ১টা ৬ মিনিটে, প্রশিক্ষণ চলাকালীন একটি বিমান হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্যাম্পাস এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। ভেতরে থাকা শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ওপর নেমে আসে মৃত্যুর ছায়া।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
মন্তব্য করুন