স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নির্যাতনের সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফররুখ আহমেদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
১৩ নভেম্বর বরখাস্তের আদেশ জারির পরই নড়েচড়ে বসেন প্রধান শিক্ষক ফররুখ আহমেদ। এর আগে ঘটনাটি নিয়ে তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি, তবে বরখাস্তের নোটিশ পাওয়ার পর রাতেই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তড়িঘড়ি করে আপোষ মীমাংসার আয়োজন করেন এবং সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রচারে চেষ্টা করেন—চাকরি ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে।
যেভাবে এলো বরখাস্তের আদেশ
১৩ নভেম্বর কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফররুখ আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—
ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৩ নভেম্বরের সভার ০২ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের কারণে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ২০২৪ সালের বিধিমালা (৩.৭) অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও আদেশে বলা হয়।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়—
বরখাস্তের মেয়াদে প্রধান শিক্ষক কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না; তবে তিনি নিয়ম অনুযায়ী ভাতাদি গ্রহণের সুযোগ পাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এই আদেশ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
আপোষ মীমাংসা হলো যেভাবে
৯ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষক ফররুখ আহমেদ সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাইদা বেগমের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। পরবর্তীতে সেই সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ও দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
১৩ নভেম্বর রাতে জগন্নাথপুর পৌর শহরের ভয়েস স্টার স্টুডিওতে শিক্ষক, ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয় বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে আপোষ মীমাংসা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান শিক্ষক বলেন—
“আমি স্বীকার করছি, আমার আচরণ শিক্ষকতার নীতিবিরোধী হয়েছে। কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। তবুও এই ঘটনায় ছাত্রী, তার পরিবার ও সমাজের যাঁরা মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
শিক্ষকের ক্ষমাপ্রার্থনা গ্রহণ করলে উত্তেজনার অবসান ঘটে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মীমাংসায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ
এসময় উপস্থিত ছিলেন —
এপিপি অ্যাডভোকেট ইয়াসিন খান, সিলেট এম.সি কলেজের ছাত্রনেতা ইসমাইল খান সৌরভ, ছাত্রনেতা রাইসুল আমিন, রাহি কামালী, সমাজসেবক আব্দুল হাকিম, সাংস্কৃতিক কর্মী মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, সাংবাদিক আমিনুল হক সিপন, আব্দুল ওয়াহিদ, শাহ ফুজায়েল আহমদ, আলী আসগর ইমন, আমিনুর রহমান জিলু, সংবাদকর্মী বাবুল দাশ, ছাত্রী সাইদা বেগমের পিতা মজিবুর রহমান, মাতা রুজিনা বেগমসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
মন্তব্য করুন