মোঃ মীরজাহান মিজান
বিশেষ প্রতিনিধি, জগন্নাথপুর
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা গ্রামে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে ১২ বছর বয়সী শিশু রিংকন বিশ্বাসকে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুই খামারকর্মচারীকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই সিলেট জেলা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—পাবেল ওরফে তাবেল (২১) ও জহিরুল ইসলাম (২৩)। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তারা নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।
ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের ২২ জুন, স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক ইউপি সদস্য লুলু মিয়ার মাছের খামারে। খামারের পাশে আমগাছ থেকে আম পাড়তে না চাওয়ায় রিংকনকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে। হত্যার পর ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। বলা হয়, রিংকন গাছ থেকে পড়ে গোবর পানিতে ডুবে মারা গেছে।
পরদিনই পরিবারের ওপর প্রভাব খাটিয়ে চাপ প্রয়োগ করে মুখাগ্নি ও দাফনের কাজ সম্পন্ন করা হয়, যাতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন থাকে। তবে রিংকনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও পরিবারের সদস্যরা ভয়ে ও চাপে ছবি তুলতে বা থানায় অভিযোগ জানাতে পারেননি।
ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এরপর ২৪ জুন ২০২৪ তারিখে নিহতের পিতা শ্রিকান্ত বিশ্বাস জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ২৭ জুন কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এরপরও থানা পুলিশ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
রিংকনের মা বাসন্তি রানী পুলিশের রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে আদালতে নারাজি দেন। পরে আদালত ১২ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ মামলাটি পুনরায় রুজু করার নির্দেশ দেন। এরপরও থানা পুলিশ আবারো একই ধরণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
এবারও বাদী পক্ষ আদালতে পুনরায় নারাজি দিলে, আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ২৩ মার্চ ২০২৫ খ্রিঃ পিবিআই সিলেট জেলাকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর এসআই তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্তে নামে পিবিআই। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে আসামি পাবেল ও জহিরুলকে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা স্বীকার করে, তারা রিংকনকে জোর করে গাছে ওঠার জন্য চাপ দেয়। রিংকন রাজি না হলে তাকে মারধর করে এবং শেষে গোবরের ঢিবিতে মুখ চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে এই হত্যাকে দুর্ঘটনা হিসেবে সাজিয়ে ফেলা হয়।
১৯ জুলাই ২০২৫ খ্রিঃ তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণ হলো, যথাযথ তদন্ত ও সাহসী প্রতিবাদের মাধ্যমে চাপা দেওয়া সত্যও একদিন প্রকাশ পায়। শিশু রিংকনের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই যাত্রা যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় — এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
মন্তব্য করুন