সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ফসলরক্ষা বাঁধে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী করা মামলা থেকে জামিন পেয়ে জেল থেকে মুক্তি পেলেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য ও দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের তিন কৃষক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেলে ফটকে কারাবরণকারী ওই তিন কৃষককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ায় তিন কৃষক হলেন, দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ভাটিধল গ্রামের কৃষক সাদিকুর, আব্দুল হাই ও আব্দুল মালিক ওরফে কালা মিয়া।
কারাগার থেকে বেরিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য কৃষক আব্দুল হাই বলেন, দিরাইয়ের ভাটিধল গ্রামে পাউবোর উপ সহকারি প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেনকে মারধর ও সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার যে মিথ্যে মামলা করেছিলেন তা থেকে আজ আমরা জামিন পেলাম। এই কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহীর যোগশাজসে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের অনিয়ম করে আসছেন। টাঙ্গনির হাওরে প্রকল্পে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা ঘটনা সাঁজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমাদের তিনজনকে হয়রাণি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ওইদিন এমন কিছুই হয়নি বরং ওই এসও আমাদের মারধর করে এবং হুমকিও দেয় আমাদের মামলা ফাঁসানোর যার ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এতে সায় দেন এবং উনার প্ররোচনায় এই মিথ্যে মামলাটি এসও মোনায়েম দায়ের করেন। তবে আমরা কৃষকরা বোরো বাঁচাতে এবং বাঁধের কাজের অনিয়ম তুলে ধরে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন প্রতিবাদ করার জন্যই আমাদের উপড় চড়াও হন প্রশাসনের কর্মকর্তা।
এদিকে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তিন কৃষককে মুক্তির পর ফটকে উপস্থিত স্থানীয় এলাকার কৃষকসহ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, বাঁধ বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহমদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সদস্য প্রদীপ কুমার রায়, শওকত আলী, জেবেল আলী। এসময় অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দিরাইয়ের স্থানীয় কৃষক আব্দুস শহীদ, তকবির হাসান, ওয়াদুদ মিয়া, এখলাছুর রহমান, একতার আলী, কামরুল হাসান, ওলিউর রহমান, ফরিদ মিয়া, শাহিবুর রহমান, শাহিন মিয়া, লাল মোহন, জুয়েল, বশির, রুবেল, সাইদুল, দুদু, ময়না মিয়া, সুমন, দীপক, রূপক দাস, নারায়ন, দ্বীপক দাস, গোপাল দাস, নজরুল, রাইস উদ্দিন, কহিনূর, মোহাম্মদ, গোলজার, প্রশান্ত দাস, ইতু দাস, জগন্নাথ দাস. সতীশ দেব, পঙ্কজ, আনোয়ার।
এ ব্যাপারে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সব সময় বাঁধের কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার থাকে, একইভাবে দিরাইয়েও আমাদের কমিটি আছে এবং কমিটির সদস্যরা এই উপজেলার অনিয়মগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তবে দিরাইয়ের ২৭ ও ২৮ নং পিআইসির বিরাট অনিময় তুলে ধরে আন্দোলন করায় পাউবোর উপ সহকারি প্রকৌশলী বাদী হয়ে কৃষকদের নামে মিথ্যে মামলা করেন এবং কৃষকরা আদালতে হাজির হলে তাদের মধ্যে তিনজন কৃষকে কারাগারে পাঠান। আজ জামিনে কারা মুক্তি পেলেন। কারাবরণকারী কৃষকদের যাবতীয় আইনী সহযোগিতা দেয়ার আশ^াস জানান সংগঠনের এই নেতা।
উল্লেখ্য, গেল ১৯ মার্চ দিরাই থানায় উপস্থিত হয়ে তাড়ল ইউনিয়নের ভাটিধল গ্রামের ১৭ জন কৃষকের নাম উল্লেখ্য করে মামলা করেন দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন।