ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে হাওরাঞ্চলের কথা বললে শুরুতেই চলে আসে সুনামগঞ্জের নাম। প্রাকৃতিক সম্পদের আঁধার এই হাওর জনপদ ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। জেলার ১২ উপজেলার যোগাযোগের সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে সেই ক্ষতের ছাপ স্পষ্ট। এবারও দুই দফা বন্যার চাপ গেছে সড়কগুলোর ওপর দিয়ে। এতে গ্রামীণ জনপদের অনেক এলাকায় এখন না চলছে সড়ক যান, না নৌযান। কঠিন হয়ে পড়েছে হেঁটে চলাচলও। রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের যাতায়াতের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেলার প্রায় ২৭ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে। ফলে হাওর জনপদে বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় উভয় সংকট দেখা দিয়েছে।
দুই বছর আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বড় সড়কগুলোর মধ্যে দোয়ারাবাজার-বাউর কাপন, কালীপুর-পাগলা-জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ-জয়নগর, জামালগঞ্জ-সেলিমগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার, পাথারিয়া-বাংলাবাজার, দিরাই-কলকলিয়া, বিশ্বম্ভরপুর-আনোয়ারপুর, সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়ক এখনও সংস্কার করতে পারেনি এলজিইডি। একইভাবে অনেক সড়ক থেকে দুই বছর আগের বন্যার ক্ষত সারাতে পারেনি সড়ক বিভাগও। এর মধ্যেই এবার দুই দফা বন্যায় এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। রাস্তায় কোনো গাড়ি চলার মতো অবস্থা নেই। বেতগঞ্জের এক বসিন্দা বলেন, ২০২২ সালের বন্যার ক্ষত এখনও রয়েছে সড়কজুড়ে। শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের নিয়ে এই পথে চলা দায়। এর মধ্যে এবারের বন্যায় আরও ভেঙেছে। এখন কীভাবে চলবে মানুষ?
আলমপুরের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, গাড়ি নিয়ে এই সড়কে এলে ভাড়া যা পাওয়া যায়, গাড়ির কাজ করাতে এর চেয়ে বেশি টাকা লাগে। এজন্য আমরা আসতে চাই না, লাইন ধরে রাখার জন্য ও পরিচিত মানুষের চাপাচাপিতে আসা লাগে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের দুই দফা বন্যায় সড়কের, বিশেষ করে গ্রামীণ সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে, মেরামত করতে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। এর আগে ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু সড়কের কাজ করা হয়েছে। বাকি যেগুলো সংস্কার করা হয়নি, সেগুলো মেরামত করতে আরও ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
একইভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপজেলা সড়কসহ আঞ্চলিক মহাসড়কেরও ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে এই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানালেন, ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করার জন্য একটি প্রকল্পে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কাজ প্রক্রিয়াধীন। এবার যে ক্ষতি হয়েছে, সেই সড়ক চালু রাখার জন্য ১৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার জন্য ২৪৯ কোটি টাকা লাগবে জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।