অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে কবি শাহাজান এর ।অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” – বইটি প্রকাশ করছে পাপড়ী প্রকাশনী। একটি শিল্প, যা মনের গভীর ভাবনা, অনুভূতি ও চিন্তাকে ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে। এমনই এক শিল্পীর কাব্যিক যাত্রার প্রতিচ্ছবি “অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ”। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আগ্রহ নিয়ে বেড়ে ওঠা এই লেখক এবার পাঠকদের সামনে এনেছেন তাঁর হৃদয়ের গভীর অনুভূতিগুলোকে তুলে ধরা একটি অসাধারণ কবিতার সংকলন।
লেখালেখির শুরু ও যাত্রাপথ
লেখকের লেখালেখির যাত্রা শুরু হয় ছোটবেলায়। স্কুলের দেয়াল পত্রিকা থেকে শুরু করে কলেজের সাহিত্য আসর, আর সেখান থেকে জাতীয় পত্রিকার পাতায় জায়গা করে নেওয়া—এ এক দীর্ঘ ও পরিশ্রমী যাত্রা। তাঁর কবিতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে, যা পাঠক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাঁর লেখার ধরণে এসেছে পরিণতভাব, গভীরতা এবং এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি।
লেখক তাঁর কবিতায় জীবনের বহুমুখী রঙ তুলে ধরেছেন। কখনো তিনি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে মেলবন্ধন করেছেন, কখনো আবার জীবনের কষ্ট, প্রেম, বিচ্ছেদ, এবং আত্ম-অনুসন্ধানের কথা বলেছেন। তাঁর কবিতা পাঠকদের শুধু আনন্দ দেয় না, বরং তাদের নতুনভাবে জীবনকে দেখতে শেখায়।
“অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” – বইয়ের অনুপ্রেরণা
“অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” বইটি লেখকের কাব্যিক যাত্রার একটি বিশেষ অধ্যায়। এটি শুধু একটি কবিতার বই নয়, এটি তাঁর মনের জানালা দিয়ে দেখা পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। লেখক বলেন, “আমার প্রতিটি কবিতা আমার মনের একেকটি রঙ। আমি চাই, এই রঙগুলোর ছোঁয়া প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে লাগুক।”
বইটি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমি সবসময় অনুভব করি, কবিতা হলো অনুভূতির ছন্দময় প্রকাশ। এই বইয়ে এমন অনেক কবিতা রয়েছে, যা পাঠকের মনের গভীরে গিয়ে কথা বলবে।”
বইটির বিশেষ দিক
“অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” বইটিতে জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে। প্রেম, বিরহ, স্বপ্ন, প্রকৃতি এবং আত্ম-অনুসন্ধানের মতো বিষয়গুলোকে লেখক গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি কবিতায় শব্দের এমন মায়াবি ব্যবহার রয়েছে, যা পাঠকদের মনে দাগ কাটতে বাধ্য।
বইটির প্রতিটি কবিতা যেন পাঠকদের এক নতুন জগতে নিয়ে যায়। কখনো পাঠক হারিয়ে যাবে গভীর অনুভূতিতে, কখনোবা উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসবে। বইটিতে এমন কিছু কবিতা রয়েছে, যা একবার পড়ার পর পাঠককে বারবার ফিরে আসতে বাধ্য করবে।
প্রকাশনা ও পাওয়া যাবে কোথায়
“অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” প্রকাশ করেছে পাপড়ি প্রকাশনী। একুশের বইমেলায় বইটি পাওয়া যাবে পাপড়ি প্রকাশনির স্টলে। এছাড়াও বইটি অনলাইনে অর্ডার করার সুযোগ রয়েছে।
পাঠকেরা যদি অনুভূতিকে শব্দে খুঁজে পেতে চান, গভীর চিন্তার মাঝে হারিয়ে যেতে ভালোবাসেন এবং জীবন ও প্রকৃতির অনুপ্রেরণার সন্ধান করতে চান, তবে এই বইটি তাদের জন্য সেরা পছন্দ হতে পারে।
কবি পরিচিতি:
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন সালদিঘা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে কবির জন্ম। তাঁর পিতাঃ আলা মিয়া এবং মাতাঃ জিরন বেগম। প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় নিজ গ্রামের সালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তিনি সরকারি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কবি ভর্তি হন পঞ্চগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে, যেখান থেকে তিনি এ গ্রেড পেয়ে মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি সিলেটের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এ গ্রেড পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সফলতা শেষে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (অনার্স) এবং স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণের পথে তিনি পা রাখেন শিক্ষকতা পেশায়। শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে তিনি রাগীব রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকার অন্যতম স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে। তাঁর দক্ষতা ও প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পরবর্তীতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
বর্তমানে তিনি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ফেলো হিসেবে গবেষণা করছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তিনি বাংলা ও ইংলিশ মিডিয়ামের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে গেস্ট টিচার হিসেবে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর শিক্ষাগত এবং পেশাগত যাত্রা শুধুমাত্র একটি কাহিনি নয়, বরং এক অনুপ্রেরণার গল্প। শিক্ষকতার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার এবং সমাজে শিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান সত্যিই অনন্য।
উপসংহার
লেখালেখি যে শুধুই একটি শখ নয়, বরং এটি একজন মানুষের মনের গভীর অনুভূতির প্রকাশ, সেটি লেখক তাঁর প্রতিটি কবিতায় প্রমাণ করেছেন। “অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” বইটি শুধু একটি কবিতার সংকলন নয়, এটি এক জীবনের গল্প, যা অনুভূতির রঙে রাঙানো।
লেখকের এই বই পাঠকদের হৃদয়ে কেমন দাগ কাটে, তা দেখার অপেক্ষায় বাংলা সাহিত্যের অঙ্গন। যারা সত্যিকার অর্থে কবিতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য “অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ” হতে পারে একটি মূল্যবান সংযোজন।
টুডেসিলেট? লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? পাঠকের জন্য কী ভাবছেন?
লেখালেখি নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো মানুষের হৃদয় ও চিন্তার গভীরে পৌঁছানো এমন সৃষ্টিকর্ম তৈরি করা, যা তাদের অনুপ্রাণিত করবে। “অন্তর্দৃষ্টি ও অনুভূতির রঙ”-এর মতো কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে আমি জীবনের বহুমাত্রিক রঙ ও অনুভূতিগুলোকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। ভবিষ্যতে আমি আরও গভীর ও পরিণত চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কাব্যিক রচনায় সাহিত্য জগতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চাই। আমার লক্ষ্য হলো এমন সাহিত্য সৃষ্টি করা, যা পাঠকের জীবনের একান্ত অংশ হয়ে থাকবে, তাদের আনন্দ দেবে, এবং নতুনভাবে জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। বইটির মূল্য ২০০টাকা
টুডেসিলেট? অনেক সময় পাঠকেরা বলেন, বইয়ের মূল্য বেশি; এ বিষয়ে কী বলবেন?
বইয়ের মূল্য নিয়ে পাঠকদের অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। তবে এটি নির্ধারিত হয় কাগজ, মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রচারণা, এবং পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচের ভিত্তিতে। একটি বই কেবল পণ্য নয়, এটি লেখকের সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল। বইয়ের মূল্য কেবল তার পদার্থিক দিকেই নয়, বরং এর সাহিত্যিক, জ্ঞানমূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বই পাঠকদের চিন্তাধারা এবং মনোজগতের বিকাশ ঘটায়, যা এক ধরনের বিনিয়োগ। তাই, একটি ভালো বই কেনা পাঠকের জন্য অনেক বেশি মূল্যবান হতে পারে, যা কেবল উপভোগের নয়, বরং শিক্ষা ও অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রেও অপরিসীম গুরুত্ব রাখে।