নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের ৫ স্টেশন দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে ৫ টি স্টেশনেই দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। সীমান্তের দুইপাড়ে আটকা পড়েছে কয়েকশ’ পণ্যবাহী ট্রাক। ভারতীয়দের বাধার মুখে শেওলা স্থলবন্দর ও জকিগঞ্জ শুল্কস্টেশন এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও জুড়ীর বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে বন্ধ রয়েছে পণ্য আমদানি-রফতানি।অন্যদিকে, শুল্কায়ন জটিলতায় তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
আমদানিকারক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথিত অভিযোগ ও ইসকন থেকে বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের দাবিতে গত রোবার ভারতের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশনে মিছিল নিয়ে জড়ো হন কয়েকশ’ লোক। তারা সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ করেন। পরে ভারতীয় বিক্ষোভকারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।
একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতের করিমগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে। ফলে রোববার থেকে ওই স্টেশন দিয়েও আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়। এদিকে, পণ্য পরিমাপ সংক্রান্ত জটিলতায় একই দিন থেকে ভারতের ডাউকি বর্ডার দিয়ে পাথর-চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইসকন ইস্যুতে ভারতের সুতারকান্দি ও করিমগঞ্জ বর্ডার দিয়ে সবধরণের আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। ভারতীয় লোকজনের বাঁধার মুখে ভারত থেকে বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারছে না। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতের সুতারকান্দিতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী অন্তত ২০০ ট্রাক এবং এপারে শেওলা শুল্ক স্টেশনে অর্ধশতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। এছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জের ওপারে ভারতের করিমগঞ্জে আটকা পড়েছে ফল ও কাঁচামাল বোঝাই অর্ধশতাধিক ট্রাক। পণ্য খালাস না হওয়ায় ট্রাকে ফলসহ কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শেওলা স্থল বন্দরের ইনচার্জ হাসান আহমদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারও শেওলা সীমান্ত পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। আমাদের এদিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমদানি-রফতানিকারকরা নিজে থেকেই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে পণ্য পরিমাপ নিয়ে অসন্তোষের জের ধরে পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। সিলেটের তামাবিল ও শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে যে পাথর আমদানি করা হয়, তা সরাসরি খনি থেকে ট্রাকে লোড করা হয়। ফলে পাথরের সাথে মাটি ও বালি মিশ্রিত থাকে।
আগে শুল্কায়নের পূর্বে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ও বালির ওজন বাদ দিয়ে পাথরের ওজন নির্ণয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে স্থলবন্দরের নতুন কর্মকর্তারা মাটি ও বালির ওজন ছাড় না দেওয়ায় লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে তামাবিল স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের ডাউকিতে পাথর ও চুনাপাথর বোঝাই তিন শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বর্ডারে পণ্য আটকা পড়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিদিনই আমদানিকারকদের ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় লোড-আনালোড এবং স্থানীয় পাথরভাঙার কলগুলোর হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে তামাবিল স্থল বন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, তামাবিল স্টেশনে আমদানি একেবারে কমে গেছে। বাংলাদেশ থেকেও তেমন কোনো পণ্য রফতানি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও জুড়ীর বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ দু’ শুল্ক স্টেশন দিয়ে কোনো পণ্যবাহী যান চলাচল করেনি।
ভারতে ইসকন সদস্যদের বাধার মুখে বন্ধ হয়ে গেছে এ দু’ শুল্ক স্টেশনের সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এতে মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ অংশে রফতানিতে কোনো সমস্যা নেই। ভারত থেকে মালামাল গ্রহণ না করায় আপাতত বন্ধ রয়েছে পণ্য রফতানি।’
জানা যায়, গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে ভারতের কৈলাশহরে ইসকন সদস্যরা শুল্ক স্টেশনের রাস্তা বন্ধ করে আমদানি-রফতানিতে বাধা প্রদান করেন। এরপর বন্ধ হয়ে যায় দু’ দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। চাতলাপুর এলসি স্টেশনের ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি সোহেল রানা চৌধুরী জানান, হঠাৎ করেই ভারতের দিকে ইসকন সদস্যরা চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের রাস্তা বন্ধ করে দেন এবং তারা বিক্ষোভ করে তাদের পতাকা বেঁধে দেন। এতে করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। একইসাথে ভারত থেকেও কোনো মালামাল আসছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসকন নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে হঠাৎ করেই ভরতের ইসকন সদস্যরা চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের রাস্তা বন্ধ করে সংগঠনের পতাকা হাতে বিক্ষোভ করেন। এতে বিগত সাত দিনে ধরে বাংলাদেশ থেকে মালবাহী গাড়ি চলাচল করেছে না, একইভাবে ভারত থেকেও কোনো মালামাল আসছে না।
চাতলাপুর চেকপোস্টের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চাতলাপুর কিংবা স্থল শুল্ক স্টেশন প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়নি। ভারত অংশে কিছু লোকের বাধার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। শুল্ক স্টেশন চালু ও আমদানি রফতানি স্বাভাবিক করতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে।’
বটুলি শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাওন দে জানান, ‘গত শুক্রবার থেকে ভারতে ইসকন সদস্যদের বাধায় বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে ভারতীয়দের বাংলাদেশে আসা-যাওয়া কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা ভারতের শুল্ক বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু এখনো তারা কিছু জানাননি।’