নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক আজিজুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটিকে বিতর্কিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সমন্বয়কদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতেই ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি আমাদের পক্ষ হতে পরিষ্কার করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী সোহেল আহমদ (অয়ন) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকাশ ভূঁইয়ার অনুসারী এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় একজন কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সোহেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পলাতক’ উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞার নির্দেশে ছাত্রলীগের ‘হিডেন অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নের জন্য হল দখলের পাঁয়তারা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
সোহেল আহমদ শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ছিলেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, সোহেল পদ পেতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকাশ ভূঁইয়ার সুপারিশে সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হোসেন বরাবর আবেদন করেন এবং সিভি (জীবনবৃত্তান্ত) জমা দেন। শিক্ষার্থীদের কাছে এর প্রমাণ আছে।
গোপন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন ও গর্হিত কর্মকা- থেকে সোহেলকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অন্যথায় সোহেলসহ যাঁরা এরূপ কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত থেকে হিডেন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে চেষ্টা করছে বা করবে তাদেরও স্বৈরাচারের মতো শেষ পরিণতি বরণ করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী নিজেদের ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র সোহেল আহমদ নেতৃত্ব দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো।
সোহেল আহমদ অয়ন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে হলে ছাত্রলীগের নেতাদের চাপে পড়ে মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হতো। আমি ছাত্রলীগের পদধারী কোনো নেতা বা কর্মী নই। চাপে পড়ে কয়েকবার ছাত্রলীগের কিছু কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছি। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া পদধারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কিছু নেতা আন্দোলনের আগে পদ ছেড়ে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হন। যাঁরা অবাঞ্ছিতের ঘোষণা ফেসবুকে দিয়েছেন, তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট ২০২৪, রোজ শুক্রবার (ছুটির দিন) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন ভুঞা (পলাতক উপাচার্য) স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ (স্মারক নং : সিকৃবি/ভিসি/সচি/বিবিধ-৫২/১০) প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে গত ১৪ আগস্ট একটি ডিন কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার দলীয় ও ছায়া সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে এবং তা গৃহীত হয়। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে ‘এ অফিস আদেশ অমান্য করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ’ এবং ‘শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অফিস আদেশ অনুসারে আগামী ১৮ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম যথারীতি চলবে’ বলে উল্লেখ করা হয়।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এ অফিস আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন বলেন- দেশের এমন জরুরী পরিস্থিতিতে শুক্রবার ছুটির দিনে একজন পলাতক ও অবাঞ্ছিত উপাচার্য (যার অসীম দূর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে) কর্তৃক স্বাক্ষরিত (নীল রংয়ের কলম দ্বারা স্বাক্ষরিত, যা দাপ্তরিক নথি হিসেবে অগ্রহণযোগ্য) যে কোন বিজ্ঞপ্তি বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে যে, অফিস আদেশটির অস্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নেই। এছাড়া অফিস আদেশ থেকে এ বিষয়টি স্পষ্টত যে, উপাচার্য হিসেবে যে স্বাক্ষর রয়েছে তা সরাসরি স্কাক্ষরিত নয় বরং তা স্কানকৃত স্বাক্ষর বসানো রয়েছে এবং নীল রংয়ের কলম দ্বারা স্বাক্ষরিত, যা দাপ্তরিক নথি হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। সুতরাং পলাতক ও অবাঞ্ছিত উপাচার্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন স্বার্থান্বেষী মহল অজ্ঞাত স্থান থেকে এ ধরণের বিব্রতকর অফিস আদেশ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি আদায়ে বাঁধা প্রদান করতে চাচ্ছে, যা কোন ভাবে কাম্য নয়।
সিকৃবি শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৬ আগস্ট, ২০২৪ থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন ভুঞার পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পদত্যাগে স্মারকলিপি প্রদান, অবাঞ্ছিত ঘোষণা, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে নির্লজ্জ ও দূর্নীতিপরায়ণ উপাচার্যর কোন পদত্যাগের খবর মিলেনি। এমনকি গত ৬ আগস্ট এর পর থেকে পলাতক রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অসীম দূর্নীতি ও অনিয়মের সাথে যুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় শিক্ষক ও নামধারী ছাত্রলীগ ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করে টিকে থাকার চেষ্টায় থাকা স্বৈরাচারের দোসর এ উপাচার্য।
শিক্ষার্থীরা আরো জানন, ইতোমধ্যে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ও প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টসহ বিভিন্ন প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলো অরক্ষিত। ভূয়া চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের দাবী দাওয়ার কথা উল্লেখ না করে ছাত্রলীগ পরিচালিত সাধারণ ছাত্রদের কথা বলা হচ্ছে। অপরাধী গোষ্ঠীর হাতে অরক্ষিত হচ্ছে দিনদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়। এমতবস্থায় উপাচার্য পদত্যাগ করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ, প্রশাসনে নতুন পদায়নসহ সিন্ডিকেট সভা না ডেকে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রত পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এছাড়া যারা ভুয়া ও মিথ্যা বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করছে তাদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি জানিয়ে তারা কোন ধরণের গুজবে কান না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান।
এদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ নিয়ে গড়িমসি এবং শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি না মানায় ফের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ। এসময় রাজনীতি নিষিদ্ধসহ আগামীকালের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার আল্টিমেটাম দেয় তারা।
রোববার শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি না মানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আজিজুল হক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ছাত্রলীগ শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। রোববার তারা ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি কর্মসূচী পালন করেছে। এর সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই।