নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সিলেট নগরজুড়ে চলে তাÐব। সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ তান্ডব চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কোনো নেতাকর্মী এসব অপকর্মে জড়িত নয় বলে দাবী করেছে। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর একটি অভিজাত রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, তান্ডবকারীরা স্বৈরাচারের দোসর। ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিএনপি তৎপর ছিল।
লিখিত বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিলো। আর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রম এবং টানা ৩৬ দিনের ছাত্রজনতার রক্তদেওয়া আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ছাত্রসহ দেশের ১৮ কোটি জনতার প্রতি।
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন- আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাবসহ শাহাদাত বরণকারী ৪ সাংবাদিকের প্রতি। এ আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় একদিনেই ৬ জন শাহাদাত বরণ করেছেন। তাছাড়া সিলেটসহ সারাদেশে শত শত মানুষ নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের সকলের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কাইয়ুম চৌধুরী রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ, আনসার আলীসহ যেসকল নেতাকর্মীরা গুম হয়েছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দীর্ঘ ১৫ বছরে দলের যেসব নেতাকর্মী ও ছাত্রজনতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন- জনতার বিজয় উৎসবে স্বৈরাচার সরকারের কিছু দোসর অত্যন্ত সুকৌশলে প্রবেশ করে সিলেট শহরে বিচ্ছিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। তাদের সাথে বিএনপি কিংবা ছাত্র-জনতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করার পর-পরই সিলেট বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে এবং কোথাও কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করালে তাদেরকে সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো তৃতীয় পক্ষ যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য আহবান জানিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে সিলেট বিএনপি সাংবাদিকদের সহযোগিত চেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদি, আরিফুল হক চৌধুরী, ড. এনামুল হক চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামিম ও আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিয়া বেগম চৌধুরী, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দীকি, জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমূখ।