বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে খুলনায় সুমন কুমার ঘরামি (৩৩) নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনারের দেহরক্ষী ছিলেন।
শুক্রবার বিকালে কেএমপির বল্লামারী এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে তিনি আহত হয়ে মারা যান।
গল্লামারী ছাড়াও খুলনার জিরো পয়েন্ট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
রাত সোয়া ১০টায় খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) আহসান হাবিব ঢাকা টাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংঘর্ষে ২৫-৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় পুলিশ অসংখ্য টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একটি ট্রাক ভাঙচুর করেন। সংঘর্ষের কারণে বিকাল ৪টা থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ও রূপসা সেতু বাইপাস সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই পাশে আটকা পড়ে শতাধিক যানবাহন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শর্টগানের ছররা) অবস্থায় চারজনসহ ২২ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এ ঘটনায় পুলিশেরও অন্তত ২৫-৩০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশ তাদেরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর তারা মিছিল নিয়ে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে হরিণটানা থানায়ও ইটপাটকেল ও খালি বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় থানার প্রধান ফটক বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীরা বিকাল সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টায় গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর আহত হয়ে নাবিল, মিজান, সৌরভ, আব্দুল্লাহ, আবির, রুবিনা ইয়াসমিন, মিজান, ফাইয়াস, রুহুল আমিন, আল শাহরিয়ার নীরব, সিরাজুল ইসলাম, রাবেয়া সুলতানা রাইবা, রাশিদা পারভীন, তানিয়া আক্তার, আবিদ, মিতু, শেখ তানিক ও হোসাইন রাসেলসহ অন্তত ২২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪ জনের শরীরে রাবার বুলেট ও শর্টগানের ছররা গুলি লেগেছে। অন্যরা টিয়ারশেলে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে ঢাকা টাইমসের কাছে জানতে চাইলে তিনি পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে ফোন রেখে দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।