নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বন্যায় সিলেটের ৫৪৮টি স্কুল জলমগ্ন হয়। এখনো জলমগ্ন রয়েছে বেশিরভাগ স্কুল। এর মধ্যে পানিবন্দি মানুষের জন্য ২৮২টি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার বন্যার্ত মানুষ বসবাস করছেন। এই অবস্থায় বন্যাকবলিত সিলেট জেলায় মঙ্গলবার মাধ্যমিকের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। সিলেট জেলার ৩০৪টি স্কুলে এখনো পানি রয়েছে।
শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বন্যার পানি নামায় সিলেট সিটি করপোরেশন, সদর সহ সীমান্তবর্তী চারটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফিরছেন। এসব স্কুল প্রস্তুত করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। আর যেসব স্কুলে পানি রয়েছে কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। সিলেটে বন্যা হলেই বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। এবার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। পানি নামায় প্রতিদিনই স্কুলে থাকা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার ১৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমধ্যে সিলেট সদরে রয়েছে ১৯, বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৯, বালাগঞ্জ উপজেলায় ২৫, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১৩, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২০, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২৪, জকিগঞ্জ উপজেলায় ৬, কানাইঘাট উপজেলায় ১৯, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৩, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৩, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ১৩ ও ওসমানীনগর উপজেলায় ২০টি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্কুলে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বসবাস করছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশাদ জানিয়েছেন, সিলেট জেলার ৩০৪টি স্কুলে এখনো পানি রয়েছে। এগুলো বন্যাকবলিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ওই স্কুলগুলোকেও পাঠদানের উপযোগী করে তোলা হবে। প্রাথমিক স্কুল খুলবে ৩রা জুলাই। আশা করা হচ্ছে এই সময়ের মধ্যে স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন বাড়ি ফিরে যাবে। আর তারা বাড়ি ফিরলে পাঠদানের প্রস্তুতি শুরু করা হবে।
এদিকে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৮৩টি স্কুলকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা অফিসের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- বন্যার জন্য এবার জেলার ২৪৪টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব স্কুল বন্যাকবলিত হলেও আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য উপযোগী ছিল। এর মধ্যে সর্বশেষ ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে। দিন দিন আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কমছে। তবে এখনো ৪ হাজার ৭৭৫ জন বানভাসি মানুষ মাধ্যমিক স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। সর্বশেষ তথ্য মতে; জেলার কানাইঘাটে ৪, গোয়াইনঘাটে ৬, জৈন্তাপুরে ৬, জকিগঞ্জে ৩, বালাগঞ্জে ৯, কোম্পানীগঞ্জে ৩, ফেঞ্চুগঞ্জে ৯, গোলাপগঞ্জে ৪, বিয়ানীবাজারে ৪, বিশ্বনাথে ৬, ওসমানীনগরে ১৬, দক্ষিণ সুরমায় ৬, সিলেট সদরে ২ ও সিলেট মহানগরে ৫টি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসি মানুষ রয়েছেন।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল খুলছে। এই অবস্থায় যেসব স্কুলে এখনো পানি কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো স্থানীয় ম্যানেজিং কমিটি ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা যখনই পাঠদানের উপযোগী মনে করবেন তখনই খুলবেন।
বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন জানান, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকার বন্যা পরিস্থিতি এখনো নাজুক। বহু মানুষ পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। এ কারণে এই তিন উপজেলায় স্কুল খুলে দেয়ার সুযোগ নেই। পানি নামলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে বলে জানান তারা। ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের উনিশমাইল এলাকার এহিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের নিচতলা এখনো অথৈ পানিতে নিমজ্জিত। ঈদের পরদিন থেকে বহুতল এই স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুর মো. সাইফ উদ্দিন জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি। স্কুলে আসার রাস্তায় এখনো কোমর পানি। স্কুল ভবনের নিচ তলা পানিতে তলিয়ে আছে। ৫০টি পরিবারের ২১০ জন মানুষ স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন।
তিনি জানান, এখনই পাঠদান শুরু করার সুযোগ নেই। পানি নেমে গেলে বিদ্যালয়কে প্রস্তুত করার পর পাঠদান শুরু করা হবে। পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের হাজীপুর-জিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকেই পানি। রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। ঈদের পরদিন থেকে বিদ্যালয়ে বসবাস করছে মানুষ। প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি। এলাকাও ডুবে আছে পানিতে। তার বিদ্যালয়ে ৮টি পরিবারের ৩২ জন মানুষ বসবাস করছেন। ধীরে পানি নামার কারণে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে লোকজনের দেরি হতে পারে। আশ্রয়কেন্দ্র সমাপ্ত হলে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের উপযোগী করে তোলা হবে।