তাহিরপুর প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওরের চারদিকে পাকা সোনার ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর। বৈশাখের এই সময়ে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যের চোখ রাঙানি, তীব্র তাপদাহের মধ্যেই হাওরের গভীর থেকে ধান কাটা ও খলায় মাড়াইয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষক। হাওরে তাপদাহে মহা কর্মযজ্ঞে কৃষক, কৃষাণীসহ নিন্ম,মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ দিশেহারা।
সরেজমিনে শনি, মাটিয়ান হাওরসহ বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র গরমে হাওরের খলায় খলায় কৃষান,কৃষানী ও তাদের সন্তান আত্নীয় স্বজনরা কেউ ছাতা হাতে কেউ বা ত্রিপাল টানিয়ে খলায় বসে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে।
গরমের কারনে হাওরে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি ধান কাটা মেশিনের সংকট থাকায় হাওরে ধান কাটা শ্রমিকরাও এই গরমে ধান কাটতে হাওরে সহজে যেতে চান না। যারা যেতে চান তারাও আবার অধিক টাকা দাবি করছে। শ্রমিকরা বিঘায় অন্যান্য বছর ৩ হাজার টাকায় ধান কাটলেও এবার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছে। এছাড়াও ধান কাটার মেশিন ৩-৪ হাজার টাকা নিচ্ছে প্রতি কিয়ারে (৩০শতাংশে ১ কিয়ার)। এরপরও হাওরে শ্রমিক সংকট রয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের শনি হাওরে ধান কাটতে আসা শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও ধান কাটতে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে এসেছি। কিন্তু এই গরমে হাওরে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই করার নাই পেটের দায়ে ধান কাটতে হচ্ছে। হাওর থেকে ধান কেটে মাথার করে খলায় আনার পর দম যায় যায় অবস্থা। প্রতি একটি বোঝায় ৫৫-৬০টি ধানের আটি আনা হয় এতে প্রায় এক মনের বেশি ধান হবে। একবার আনার পর আধা ঘণ্টা বসে জিরাইয়া (বিশ্রাম নিয়ে)পরে আবারও হাওরে যাই।
শনি হাওরের কৃষক সাদেক আলী জানান, তীব্র তাপদাহের দাপট ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে সহজ হলেও আমাদের অবস্থা খুবেই খারাপ। তারপরও ধান শুকাতে হবে না হলে জীবন বাঁচানোও দায় হয়ে পড়বে। এরপরও কপাল ভাল যে আগাম বন্যা আমাদের ফসলের ক্ষতি আশংকা নেই। অন্যান্য বছর এই সময়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হত হাওরের হাজার হাজার কৃষকদের। এদিকে শ্রমিক সংকট রয়েছে হাওরে পাশাপাশি মেশিনের সংকটে পাকা ধান কাটতে পারছে না অনেক কৃষক। কোনো উপায় নেই কষ্টে ফলানো হাওরে পাকা ধান ত আর হাওরে রাখা যাবে না।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ হাসান উদ দোলা জানান, উপজেলায় হাওরে চলতি মৌসুমে ১৭হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এতে ৮০হাজার মেট্রিকটনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার মূল্য ২শ ৪৪কোটি ৮০লাখ টাকার বেশী। প্রচন্ড তাপ দাহের মধ্যে এই পর্যন্ত ৬০ ভাগের বেশী কাটা হয়ে গেছে। হাওরে প্রর্যাপ্ত কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিনে কৃষকরা ধান কাটছে দিনে পাশাপাশি রাতের বেলায়। এই গরমে কৃষকদের সর্তকতা অবলম্বন করে ধান কাটা পরামর্শ দিচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান জানান,তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বেশী বেশী করে ডাবের পানি অথবা বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে গর্ভবতি, শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। প্রচন্ড তাপমাত্রার কারণে জ্বর সর্দি ও ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।