ডেস্ক রিপোর্ট : ইসরায়েলে ঢুকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের ৪০ শতাংশই শিশু। এছাড়া গাজায় ২০ লাখ মানুষ বিপর্যয়ের মুখোমুখি রয়েছেন।গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরার বরাত দিয়ে শুক্রবার আল জাজিরা জানায়, উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় চার হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে এক হাজার ৬৬১ শিশু।
আল-কুদরা জানান, ইসরায়েলি হামলায় আহত হয় ১৩ হাজার ২৬০ ফিলিস্তিনি। তিনি বলেন, বাসাবাড়ির মেঝে, ভূমি ও হাসপাতালের বারান্দায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।উপত্যকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না হাসপাতাল, স্কুলের মতো বেসামরিক স্থাপনা। এমনকি ধর্মীয় পবিত্র স্থান মসজিদ, গির্জাতেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে বিমান চালানো হয়। হামলাটি ইসরায়েল করেছে বলে জানিয়েছেন জেরুজালেমের অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট এবং ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। খবর রয়টার্সের।গাজার হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হামলায় ১৮ খ্রিস্টান ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে গির্জা থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় ২০ লাখ মানুষ বিপর্যয়ের মুখে রয়েছেন। পানি, খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি নেই। টিকে থাকার জন্য গাজার সব কিছু প্রয়োজন। শুক্রবার রাফাহ ক্রসিংয়ে মিসরের অংশে তিনি এসব কথা বলেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।গাজায় ত্রাণ সরবরাহের সম্ভাবনা মাথায় রেখে শুক্রবার রাফাহ ক্রসিং পৌঁছেছেন গুতেরেস। এখানে শতাধিক ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজায় প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। গাজায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত একমাত্র পথ এই রাফাহ ক্রসিং।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে এই বিধিনিষেধের বিষয়ে স্পষ্ট হতে কাজ করছি। যাতে এসব ট্রাক যেখানে প্রয়োজন সেখানে পৌঁছাতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এসব ট্রাক আমাদের নিয়ে যেতে হবে।এদিকে, অব্যাহত বোমা হামলার মধ্যে গাজা সীমান্ত দিয়ে স্থল হামলা চালানোর জন্য প্রস্তত রয়েছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ অবস্থায় চলমান এ নৃশংস হামলা অবিলম্বে বন্ধ করাসহ গাজার ওপর থেকে অবোরধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় দ্রুততর সময়ে মানবিক, চিকিৎসা, ত্রাণ সহায়তাসহ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, ইসরায়েল-হামাসের সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য এখন ‘অতল গহ্বরের কিনারে’ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি। চলমান এই সংঘাত পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে বলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।