সুনামগঞ্জ

জামালগঞ্জে দূর্গম পাগনার হাওরে জনশূন্য এক ইউপি কার্যালয়

  প্রতিনিধি ৩১ জুলাই ২০২৩ , ৩:১৪:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

বাদল কৃষ্ণ দাস:: মাস দু’য়েক আগেও যে ইউপি কার্যালয়টি ছিল জনগণের পদচারণায় মুখরিত। জনতার ভীড় ঠেলে প্রয়োজনীয় কাজ করাটাই ছিল দূষ্কর। ব্যস্ত চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব, কালেক্টর, তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা, গ্রাম পুলিশ, পাইক পেয়াদা সবাই। নিভৃত আলাপ চারিতার কোন ফুসরত ছিল না। অথচ মাস দু’য়েক পরেই সেটির ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। নীরব নিস্তব্ধ ভূতুড়ে কার্যালয় রূপেই সাক্ষ্য দিচ্ছে ফেনারবাঁক ইউপির নব নির্মিত নান্দনিক ভবন। ৫১ বর্গ কি.মি.আয়তনের মধ্যে যোগাযোগে দূর্গম আর ব্যয় বহুল হওয়ায় ৪৪ টি গ্রাম নিয়ে প্রায় ৪২ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রাম আদালত কেন্দ্রটিতে নিত্য কোন না কোন প্রয়োজনে আগের মতো কেউ আর যায় না সেখানে। লোকমুখে আলোচনা সমালোচনা ঝড় বিদ্যমান। এতো টাকা পরিবহন খরচ করে একই কাজে বারংবার দূর্গম হাওর গভীরে যাওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এযেন “খাজনা থেকে বাজনা বড়” জন ভোগান্তির অহেতুক পণ্ডশ্রম। দাফতরিক কাজের স্তুপ জমছে দৈনন্দিন কার্যাবলীতে। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয়ে দূর্গম স্থানে নির্মিত এই কার্যালয়টি জনবিমুখ রয়ে যাচ্ছে, রয়ে যাবেও। কেউ না গেলে তো আর জোর করে কাউকে কোথাও নেওয়া যাবে না তেমনটিই বলছেন আর্থিক দন্ডের মুখে পড়া ভোগান্তির শিকার হাওরবাসী। ব্যয়বহুল যাতায়াতের কারণে ফেনারবাঁক ইউপি কার্যালয় হতদরিদ্র জনগণের কাছে যেন এক আতংক।
ইউনিয়নের যেকোনো স্থান থেকে সেখানে যেতে বর্ষা মৌসুমে হাজার টাকা নৌকা ভাড়া লাগে। হেমন্তেও হয়রানি, পায়ে হেটে যেতে হবে মাইলের পর মাইল। অথচ উপজেলা সদরে অস্থায়ী কার্যালয়ে বছরের পর বছর ধরে স্বাচ্ছন্দ্যে চলে আসছিল ইউপির সকল সেবাকাজ। জনগণ সময় বাঁচিয়ে একই খরচে উপজেলা সদরে বিভিন্ন দাফতরিক প্রয়োজনীয় কাজ সেরে, নিত্য প্রয়োজনীয় হাট বাজারে কেনাকাটা করে, হাসপাতালের চিকিৎসা সেরে রোগির জন্য ঔষধ নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এখন উপজেলা সদর থেকে বহুদূর, উল্টো পথে দূর্গম এক ইউপি কার্যালয়ে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন, এটা সেটা যেকোনো কাজেই সারাদিন চলে যায়। একই কাজে বার বার যেতে হয়। খরচ হয় কয়েক দফা। ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট কাজে স্কুল,কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বেকায়দায়। এযেন দারিদ্র পীড়িত জনগণের কাছে “মরার উপর খাড়ার ঘা”। এনিয়ে ফেইসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূক্তভোগিরা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেম্বাররাও অনর্থক ব্যয় সাপেক্ষ এই দূর্গম কার্যালয়ে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন। ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিল্টন সরকার, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাব উদ্দিন, ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার জন্টু তালুকদার, ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার সজল পুরকায়স্থ, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার কনিকা রাণী তালুকদার, নার্গিস সুলতানা জানান, সেখানে গেলে নৌকা রিজার্ভ করে নিয়ে যেতে হয়। সেই সাথে হাওর পেরিয়ে আসা-যাওয়াটাও হতদরিদ্র জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া হাওরের মাঝখানে ফেনারবাঁক গ্রামে গিয়ে কাজ করা অনেক সমস্যা আর দূর্ভোগ।হাজার টাকা যাতায়াত ভাড়ার ভয়ে জনগণই যেখানে যায় না, সেখানে আমরা ওয়ার্ড মেম্বাররা গিয়ে কি করবো।তারা আরো জানান, আগে উপজেলা সদরে অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে কাজ করাটা আমাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক কার্যক্রম সহজেই সমাধা করা যেত। এখন একটি কাজের জন্যই ইউপি অফিস আর উপজেলা সদর বার বার আসা-যাওয়ায় কয়েকদিন লাগে। আর এতে কয়েক দফা যাতায়াত ভাড়া গুনতে হয়। উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের মাতারগাঁও গ্রামের কলেজ পড়ুয়া রাজিব তালুকদার একটা চাকরির আবেদন করবে। সে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহের খোঁজে। অনেক ডিগবাজি খেয়ে গেলো ইউপি কার্যালয় ফেনারবাঁক গ্রামে। আমির হামজা নামে এক যুবক কাগজ প্রস্তুত করে দেবে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় অধীর অপেক্ষায় অর্ধদিবস গচ্ছা যায়। তারপর প্রত্যয়নে চেয়ারম্যানের সীলস্বাক্ষর লাগিয়ে দৌঁড়ে যায় আবার উপজেলা সদরে গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করার কাজে। শেষে সারাদিন নাজেহাল হয়রানির পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। বিষ্ণুপুর গ্রামের দুস্থমাতার ভিজিডির কার্ডধারী সুক্লা রাণী সরকার। তিনি জানান, তার গ্রাম থেকে ফেনারবাঁক গেলে রিজার্ভ নৌকা ভাড়া লাগে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। এমতাবস্থায় ভিজিডির চাউল সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এরকমটি হচ্ছে প্রত্যহ, সবার বেলাতেই। সময়ের অপচয়, আর্থিক ক্ষতি আর হয়রানির ভয়ে বিরক্ত জনগণ ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট কাজে দূর্গম স্থানে যেতে আসতে অনিচ্ছুক থাকায় প্রত্যেক কার্যদিবসে জনশূন্য নীরবতা বিরাজ করে ইউনিয়ন পরিষদ আঙ্গিনায়। ইউনিয়নের সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ এবং ওয়ার্ডের প্রতিনিধিদের দাবী ইউনিয়নের কার্যক্রম আগের মতোই উপজেলা সদরে অস্থায়ী কার্যালয়ের মাধ্যমে পুন:বহাল করা হোক। আর এতে হাওর বেষ্টিত অভাব তাড়িত হত দরিদ্র জনগণের জন্য ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের সেবা পাওয়া সহজতর হবে। এব্যাপারে ভূক্তভোগিরা সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। #

আরও খবর

Sponsered content