ক‌্যাম্পাস

সিলেটে প্রাথমিকে শুন্য ৩ হাজারের বেশী শিক্ষকের পদ

  প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৩ , ৮:১৫:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

এমজেএইচ জামিল : সিলেট অঞ্চলে প্রাথমিকে ৩ হাজারের বেশী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ১৬০ টি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব স্কুলে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে কার্যক্রম। এছাড়া সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৯৬৪ টি সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রমে।

সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলার ৫ হাজার ৫৪ টি বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ১২৪ জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৬০টি প্রধান শিক্ষক ও ১ হাজার ৯৬৪ টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এছাড়া বিভাগের ৪ জেলায় অফিস সহকারী, এমএলএসএস ও নৈশপ্রহরী সহ আরো সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে।

একসাথে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি থাকায় পাঠদান চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত শিক্ষকদের। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষা কার্যক্রমে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুন্যপদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ।

বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৫ হাজার ৫৪টি প্রধান শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩ হাজার ৮৯৪ জন। এরমধ্যে ১ হাজার ১৬০ টি পদ খালি রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৩৩৫ টি, সুনামগঞ্জে ৩১০ টি, হবিগঞ্জে ২১৯ টি ও মৌলভীবাজারে ২৯৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।

এছাড়া বিভাগে ২৫ হাজার ৭৮১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২৩ হাজার ৮১৭ জন। এরমধ্যে খালি রয়েছে ১ হাজার ৯৬৪ টি পদ। সিলেট জেলায় ৭ হাজার ৮৬৫ টি পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ৬৭০ টি, সুনামগঞ্জে ৭ হাজার ২৫৪ টি পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ৭৫১ টি, হবিগঞ্জে ৫ হাজার ৩২৪ টি পদের বিপরীতে শুন্য রয়েছে ২৪৬ টি ও মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৩৩৮ টি পদের বিপরীতে ২৯৭ টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৬৬ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৯২৬টি শূন্যপদ রয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, মোট শূন্যপদের মধ্যে ২৯ হাজার ৮৫৮টি প্রধান শিক্ষকের পদ এবং ৮ হাজার ৬৮টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৭১টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন কর্মরত আছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ১ম ধাপে ৩টি বিভাগের (রংপুর, বরিশাল ও সিলেট) শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরের মাসে অর্থাৎ মার্চে প্রকাশ করা হয় ২য় ধাপে আরও ৩ টি বিভাগের (খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ) বিজ্ঞপ্তি। এই ৬ বিভাগে প্রাক প্রাথমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের জন্য আবেদন করেন ৮ লাখ ১৩৮ জন। এরমধ্যে ১ম ধাপে (রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে) আবেদনকারী ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭০০ জন এবং ২য় ধাপে (খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে) আবেদন করেন ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৩৮ জন। সবশেষে ৩য় ধাপে ১৪ জুন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শেষ ধাপে ২৪ জুন থেকে শুরু হয়ে ৮ জুলাই পর্যন্ত চলে আবেদন। ৩ ধাপের পরীক্ষা আগামী আগস্ট থেকে কয়েক ধাপে শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র।

জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইতিহাসের সবথেকে বৃহৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষকরা যোগদান করেন। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী ৩৭ হাজারের অধিক শিক্ষক নিয়োগ পান। নিয়োগের পরও দেশব্যপী শিক্ষক সংকট রয়েই যায়। এর পরপরই নতুন করে বিভাগ-ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ডিপিই সূত্রে জানা যায়, ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এই সময়ে নতুন করে অবসরে যাওয়াজনিত কারণে শুন্য হওয়া শিক্ষকদের পদ এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে। এই সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজারের অধিক হতে পারে।

ডিপিই’র নিয়োগ সংক্রান্ত বিভাগে গিয়ে জানা যায়, ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন কিছু সমালোচনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই একই মডেলে তারা এবারের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও নিতে চান। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি তাই ডিপিই আগামী আগস্ট মাস থেকেই নিয়োগ পরীক্ষা নিতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, কোন ক্ষেত্রেই শুন্যপদ থাকা কাম্য নয়। আর প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আগামীতে দেশে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি নিয়োগ উত্তীর্ণদের মাঝ থেকে শিক্ষকের শুন্যতা পূরণ হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে লোকবল সঙ্কটের সমাধান করতে সরকার কাজ করছে।

সূত্র : দৈনিক জালালাবাদ

আরও খবর

Sponsered content