রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়কই একমাত্র বাঁচার পথ: সরকারকে মির্জা ফখরুল

  প্রতিনিধি ১৩ মে ২০২৩ , ৩:৩৫:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ডেস্ক রিপোর্ট : ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয় রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের বাঁচার পথ। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।

৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মূল কারণ হলো- জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দায় তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে কোনো ধানাই-পানাই করে বা কেরিকাটা করে লাভ হবে না। ইনশাআল্লাহ জনগণের বিজয় হবে।

শনিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মাঝখানে ২ সপ্তাহের বিরতির পর আবারও রাজধানীতে বড় ধরণের শোডাউন করেছে বিএনপি। এরআগে গত ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছিল বিএনপি। শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর ঢল নেমেছিল। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর কর্মসূচি হলেও ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন।

একদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর, অন্যদিকে ফকিরাপুল ও আরামবাগ মোড় এবং আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা আড়াইদার দিকে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয় কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ। আজকে রিক্সাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায় এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে। প্রত্যেকটি খাতে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হজের বিমান ভাড়াও তারা বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী তিনটি দেশ সফর করেছেন। কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ বিদেশীরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশে-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এবার তারা যেনতেন ভাবে নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় দেখতে চাই। এই দাবিতেই আমরা দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৩৯ লাখ মানুষকে আসামি করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। ৭১ সালের মতো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলাতানা, আব্দুল খালেক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, অঙ্গসংগঠনের সাদেক আহমেদ খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জিলানী, হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহম্মেদ, আনোয়ার হোসাইন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুর রহিম, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

নতুন কর্মসূচি: শনিবারের সমাবেশে যুগপৎ আন্দোলনের ৪ পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১৯ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলা ও মহানগর, ২০ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগর, ২৬ মে শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১৯ জেলা এবং ২৭ মে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৫ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ হবে।

আরও খবর

Sponsered content