সারাদেশ

তাপদাহে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  প্রতিনিধি ১৩ এপ্রিল ২০২৩ , ৭:১২:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বসন্তের বিদায়বেলায় সপ্তাহ ধরে প্রকৃতিতে চলছে প্রচন্ড তাপদাহ। শুধু সিলেটে নয়, এ গরম পড়েছে দেশের সর্বত্র। সিলেটসহ সাত বিভাগে এখন বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এ তাপপ্রবাহ চলতেই থাকবে। আজ শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা আরও বেড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে পারে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছুঁয়েছে তাপমাত্রা। রাজশাহীতে ছিলো ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ২। তবে অনুভূত হয় ৪২ ডিগ্রীর মতো।অতিমাত্রার দাবদাহে গ্রাম থেকে শহর, সবখানেই নাভিশ্বাস অবস্থা। পবিত্র রমজানে রোজা রেখে এই দাবদাহে সবার মাঝেই এক অস্বস্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার মান যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সাথে কমছে কর্মঘণ্টা। গরমের তীব্রতার সাথে খরার প্রকটতাও যেন বেড়েই চলেছে। অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি জমি। খরার প্রভাবে বিভিন্ন সবজি ও ফলের ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।এদিকে, টানা তাপপ্রবাহে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। রোজায় দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া অবস্থায় প্রচুর ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। হতে পারে হিট স্ট্রোক। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, এই তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট তীব্র গরমে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের হৃদপিন্ড ও নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এ থেকে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই অবস্থাকে বলা হয়, হিট স্ট্রোক। এ পরিস্থিতির শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়াময় স্থানে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে শীতলতম স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

ডা. লেলিন বলেন, প্রচ- গরমে কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মামস, জলবসন্ত, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। বয়স্ক, শিশু ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন-গর্ভবতীদের মধ্যে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসময় শিশুদের মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই এসময় শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়া, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও বরফ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।

এদিকে, প্রচন্ড গরমে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ওসমানী হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০-৭০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে উপজেলাভিত্তিক যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী দেশের একাধিক এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হতে পারে। রাজধানীতে তা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।
আবহাওয়া সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।

চৈত্রের শেষে এমন তাপপ্রবাহ বইলেও মাসের শুরুটা কিন্তু আরামদায়ক ছিল। এর কারণ ছিল বৃষ্টি। চৈত্র মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছে। চলতি এপ্রিলের ২ তারিখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে চলা টানা বৃষ্টি শেষ হয়। এরপর অবশ্য দু-এক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির দেখা নেই কোনো স্থানে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৪৪টি স্টেশনের কোথাও গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি।

আবহাওয়াবিদ মো.বজলুর রশীদ বলেন, আগামী রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। এরপর কিছুটা কমতে পারে। ১৭ এপ্রিল দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content