সুনামগঞ্জ

সুরমা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে জামালগঞ্জের বিস্তীর্ণ লোকালয় ফসলি জমি

  প্রতিনিধি ১৯ মার্চ ২০২৩ , ৩:১৯:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বাদল কৃষ্ণ দাস:: লাগাতার সুরমা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ সদরে তেলিয়া গ্রামসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার অসংখ্য বাড়ি-ঘর। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্বর্পিল এই নদী বাঁকে বাঁকে গিলে খাচ্ছে বহু গৃহস্থের আদি বসতি ভিটা। এসব পরিবার এখন বাস্তুহারা। বাপ-দাদার আদি বসতি ভিটা বাড়ি হারিয়ে শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। এখনো ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন এখানকার থেকে যাওয়া অবশিষ্ট বসতিরা।
বিগত কয়েক বছর আগে নদীতীর ভাঙ্গন রোধে সরকারী প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে কাজ করার পর কিছুটা ভাঙ্গন রোধ হলেও গ্রামের দক্ষিণ-পুর্বাংশে তেলিয়া-শাহাপুর বাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকা এখনো ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে।
জানা গেছে, জামালগঞ্জে সুরমা নদীর তীরবর্তী গ্রাম- তেলিয়া, কামলাবাজ, নয়াহালট, লক্ষ্মীপুর, লালপুর, ওপারে গোলকপুর, বৌলাইগঞ্জ বাজার, রামপুর, আমানীপুর সহ দীর্ঘ এলাকায় প্রতি বছরেই থেমে থেমে বাঁকে বাঁকে নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থনীয় বাসিন্ধারা জানান, এতে কয়েকশত বাড়িঘর নিমজ্জিত হয়েছে নদীগর্ভে।
ভাঙ্গনের কারনে কেউ কেউ কিছু দিন খোলা আকাশের নীচে বসবাস করে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, তেলিয়া গ্রামে সুরমা নদীর করালগ্রাসে ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভরা বর্ষার জোয়ারে নদী যখন পূর্ণ যৌবনাপ্রাপ্ত হয় তখন উত্তাল রূপ ধারণ করে স্রোত আঘাত হানে নদীতটে। তখন আতংক বিরাজ করে কখন জানি নদীর পেটে বিলীন হয়ে যায় তাবৎ লোকালয়। এই ভয়ে অনেকেই বাড়ি-ঘর হারিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কোন রকম টিকে আছেন।
তেলিয়া গ্রামে, হাবিব গনি, আব্দুল হক, মজুমদার, কামরুল ইসলাম আলমগীর, বাছিত মিয়া, ফজুলক, আবুল খায়ের বাদশা,পরিস্কার বিবি,শাহনাজ, আলী হোসেন,সাইদুল, শামীম, পুলক , মনিন্দ্র পাল, ভষণ বাবু, মাফিকুল আলম, শামছুল আলম, পলাশ তালুকদার, আ:হানিফ, এরশেদ আলী, নুর মিঞা, আ: রউফ, সিরাজ মিঞা, সাধু, খোকা, ইয়াকুব আলী, আছরব আলী, আইয়ুব আলী সহ আরো অনেকের বাড়ি ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান স্থনীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিকুর রহমান জানান, নদী ভাঙ্গনের কারনে তেলিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন তেলিয়া গ্রাম ও শাহাপুর বাঁধ বাজারের থেমে থেমে ভাঙ্গছে।
স্থানীয় বাসিন্ধা কামরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভাঙ্গনের কারনে বহু পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় আছেন। আমার নিজের বাপ-দাদার ভিটে বাড়িও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
তেলিয়া গ্রামের বাসিন্ধা, আইয়ুব আলী বলেন, বাপ-দাদার ভিটা মাটি ঘর ভাইঙ্গা নিছে সুরমা নদী ভঙ্গনে। বহু মাইনসের জমিও ভাঙ্গছে। আমরা তিন ভাই’র ঘরও নদীতে নিয়া গেছে। এখন বহু কষ্টে অন্য জায়গায় কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে আছি।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিষ্কার বিবি বলেন, আমার সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। বাচ্চা কাচ্চা নিয়া অন্য মাইনষের বাড়িত আছি বলেই কেঁদে কেঁদে চোখ মুছেন। এখানের স্থানীয় বাসিন্ধা মজুমদার বলেন, আমরা এখানে স্থায়ী বাঁধ চাই। দীর্ঘ বছর ধরে ভাঙার কারণে আমাদের বহু বাড়িঘর ভাংছে। বর্ষার সময় নদী আরো বেশী ভাঙ্গে। এই বছর অসময়ে নদী ভাঙা শুরু হয়েছে। আমারার কিচ্ছু করার নেই, শুধু চাইয়া চাইয়া দেখি আর আক্ষেপ করি। এব্যাপারে জানতে চাইলে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জামালগঞ্জ-১ শাখা) জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন, তেলিয়া গ্রামের ভাঙ্গন থেকে শাহাপুর বাঁধ বাজার পর্যন্ত পাঁচশত মিটার দৈর্ঘ্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে নদী ভাঙ্গন রোধে এই প্রকল্পটি ফেব্রুয়ারিতেই (২০২৪) পাস হওয়ার কথা। প্রকল্পটি পাশ হলেই নীতিমালা অনুয়ায়ী কাজ শুরুর আশা করা যায়।

আরও খবর

Sponsered content