প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২২ , ৮:১০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
ডেস্ক রিপোর্ট : খুলনাকে সড়ক ও জলপথে বিচ্ছিন্ন করে রাখা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত শহরে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। শত বাধা ডিঙিয়ে, শত পথ মাড়িয়ে সমাবেশের জনসমুদ্র থেকে বিএনপি চারটি দাবি তুলে ধরেছে।
সমাবেশকে ঘিরে ছোট দুটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও মোটা দাগে শান্তিপূর্ণই হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকেও খুব একটা বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত পুলিশের সদস্যদেরকে শুধুমাত্র সমাবেশে আগতদের কাছে লাঠি থাকলে তা নিয়ে নিতে দেখা গেছে।
হঠাৎ করে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে শুক্রবার থেকে সবধরণের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার পর মাঝিদের ধর্মঘটের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয় রূপসা ঘাট ও জেলখানা ঘাটে যাত্রী পারাপার। এ দুটি ঘাট শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই ধর্মঘট সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বহু মানুষের সমাগম হয়েছে জনসভায়। বিএনপি বলছে, এই ধর্মঘট ‘সরকারী’ ধর্মঘট।
খুলনা শহর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত থেকেই বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী খুলনা শহরে ঢুকে পড়েছিল।
বিভাগের আসপাশের দশটি জেলা থেকে দু-তিনদিন আগে থেকেই শহরের দৌলতপুর ও খালিশপুরসহ অন্যান্য এলাকায় এসে জড়ো হয়েছিলেন। সবগুলো জেলা থেকেই মানুষ এসে যোগ দেয় এই জনসভায়।
রাত ১২টার দিকে তারা শহরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে এসে জড়ো হতে শুরু করেন, যেখানে তৈরি করা হয়েছে সভামঞ্চ। সকাল থেকেই খুলনা শহর পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। রাস্তাঘাটগুলো ছিল বিএনপি নেতাকর্মীতে পূর্ণ। বিএনপি নেতারা বলছেন রিকশা, ইজিবাইক কিংবা পায়ে হেঁটে যে যেভাবে পারছেন খুলনা অভিমুখে এসেছেন।
খুলনা শহর থেকে প্রায় একশ বিশ কিলোমিটার দূরের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি মিছিল সকাল দশটার দিকে শহরে এসে পৌঁছে। তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তার নেতাকর্মীরা প্রায় ৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শহরে এসেছে। সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে কাল থেকে। তাও যে যেভাবে পেরেছে এসেছে। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে সকালেই। এভাবেই শত পথ পেরিয়ে, শত বাধা মাড়িয়ে সাধারণ মানুষ পৌছেন শহরে। এতে খুলনা শহর রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
নেতা-কর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিকৃতি বহন করছিলেন। অনেকের হাতে দলের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ দেখা গেছে। কেউ কেউ নেচে গেয়ে সমাবেশে এসেছেন। মিছিলে সরকারবিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়েছে। সমাবেশের মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক গান প্রচার করে কর্মী সমর্থকদের উজ্জীবিত করা হচ্ছিল সকাল থেকেই।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সকালেই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তিনি খুলনা পৌঁছে যান। সভামঞ্চে একটি চেয়ার ফাঁকা রেখে বাকী চেয়ারগুলোতে নেতারা বসেন। বিএনপি নেতারা জানান, তারা তাদের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্য চেয়ারটি ফাঁকা রেখেছেন।
সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখনও সময় আছে নিরাপদে সরে যান, না হয় পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না।’
খুলনাবাসীকে অভিবাদন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সভা প্রতীক মাত্র। খালেদা জিয়ার চেয়ার খালি। তিনি গৃহবন্দি। তাঁর স্মরণে এই চেয়ার খালি। জনতার সৈনিক, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসো। এই দেশকে নরকে পরিণত করেছে সরকার। সব অর্জন ধ্বংস করে ফেলেছে। অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে এসব করছে সরকার। একবার ভোট ছাড়া, আরেকবার নিশি রাতে। ২০২৩ সালে নির্বাচন একইভাবে করার পায়তারা।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বিবিসিকে বলেন, ‘এই চেয়ার ফাঁকা রাখাটা প্রতিকী ব্যাপার’। তিনি বলেন, তারা মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং খালেদা জিয়া ফের রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। সেটাকে প্রতীকী রূপ দেয়ার জন্যই তারা চেয়ার ফাঁকা রেখেছেন।
সমাবেশ থেকে চারটি মূল দাবি তুলে ধরা হয় : ১. খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। ২. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। ৩. জ্বালানি তেল ও জিনিসপত্রের দামের উর্দ্ধগতির নিয়ন্ত্রণ। ৪. নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা।
খুলনার এই সমাবেশটি সম্প্রতি শুরু হওয়া বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশের তৃতীয়টি। প্রথম সমাবেশটি হয় চট্টগ্রাম। সেই সমাবেশে বিএনপির বড় জনসমাগম হয়। দ্বিতীয় সমাবেশটি ময়ময়নসিংহে হয়। এই সমাবেশের আগেও কয়েকদিন ধরে ময়মনসিংহ শহরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলো।
এসময় বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল সরকার বিএনপির এই সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে তাদের সমর্থিত পরিবহন মালিক সমিতি দিয়ে কৃত্রিমভাবে শহরকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। সরকারি দল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে। অবশ্য বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ময়মনসিংহে বড় জমায়েত করতে সমর্থ হয় বিএনপি।
এবার খুলনাতেও একইভাবে যানবাহন সংকট তৈরি করে শহরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার মত পরিস্থিতি দেখা গেল। তারপরও শেষ পর্যন্ত খুলনাতেও বড়সড় জমায়েতই হল। জনসমাবেশ রূপ নিলো জনসমুদ্র।