সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে বন্যায় ১৭শ’ কোটি টাকার ক্ষতি

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২২ , ৫:৫৮:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অসংখ্য মানুষ ঘর হারিয়েছেন। খামারীদের স্বপ্ন ভেসে গেছে বানের জলে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে উঠা নিয়ে চিন্তিত ক্ষতিগ্রস্তরা। সরকারি হিসাবে এই পর্যন্ত এক হাজার সাতশ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশী হবে বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পাকা, আধাপাকা ও কাচা ঘরবাড়ি আংশিক ও স¤পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৬ হাজার ৬২ টি। টাকার অংকে ক্ষতি ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার টাকার। এক হাজার ৬৪৭ টি গবাদিপশুর মৃত্যু ঘটেছে। ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। হাঁস-মুরগি মারা গেছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯৪১ টি। সবজিসহ নানা জাতের শস্য ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৩২ হেক্টর। বীজতলা ২৯ হেক্টর। অন্যান্য হ্যাচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ টি। এই চার খাতে ক্ষতি হয়েছে ২শত ৪৮ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। ১৪৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ১শ’ ৪৯ টি মসজিদ, ৩৮১ টি মন্দির এবং ২০ টি গির্জার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন ও উপাসনালয়ের টাকার অংকে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৬৪৯ টাকার। কাচা-পাকা ৭শ’ ১১ কিলোমিটার সড়ক, ২ হাজার ৬০৫ টি সেতু ও ৩৯ টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮শ’ ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

নদী ও বাঁধ ভেঙে এবং বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৯ কোটি ৫ লাখ টাকার। জেলার ১ হাজার ৪৭৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪০টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪৪ টি কলেজ, ১৩০ টি মাদ্রাসা মিলে ১৯ কোটি ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৬৫ হাজার ৫৩৭ টি গভীর নলকূপ, ৫৩ হাজার ৩৭৪ অগভীর নলকূপ এবং ১৭ হাজার ৯৩৯ টি হস্তচালিত নলকূপ, ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮১ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, ১৪ হাজার ৭০০ পুকুর এবং ২ হাজার ৩১ টি জলাশয় ডুবে ক্ষতি হয়েছে ১শ’ ৭৬ কোটি ৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ১২ টি হাসপাতাল, ৩০ টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ২৯৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার। জেলেসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ৮ হাজার ৭৮২ টি নৌকা, ৩ হাজার ৬শ’ ট্রলার এবং ১৩ হাজার ৫১ টি জাল নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭৩ কোটি টাকার।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা এই খাতগুলোরই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী তাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলাব্যাপী ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাবেক মজুদ ৩শ’ ১১ টন চালসহ ১ হাজার ৮৫৬ টন চাল, সাবেক মজুদ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকাসহ ২ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিলের ৫৫ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং ১০ লাখ টাকার গো-খাদ্য, ২৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন এবং ৬০ লাখ টাকা বিতরণ চলছে। একইসঙ্গে জেলার ১১ টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে গৃহ নির্মাণের জন্য ৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা স্ব স্ব বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে। পরে সেগুলো ডি ফরমের মাধ্যমে দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর অনুলিপি সংশ্লিষ্ট সকল দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content