প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২২ , ৭:২৩:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে টালমাটাল সিলেট। এরমধ্যে আজ সোমবার থেকে ১৩ ঘন্টার লোডশেডিংয়ের শিডিউলে জনমনে রীতিমত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ১৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ১ ঘন্টা করে ৩ বার লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঘোষণা করলেও কথা রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সিলেট নগর এলাকায় রোববার পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ বার ৮ থেকে ১০ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটে। এজন্য চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কম সরবরাহকে দায়ী করছেন বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, রোববার সিলেটে ২১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৮৮ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১৪৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় মাত্র ৫৯.৫ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে ঘোষিত লোডশেডিংয়ের শিডিউল রক্ষা করতে পারছেনা বিদ্যুৎ বিভাগ। তাই সোমবার থেকে দৈনিক ১৩ ঘন্টার লোডশেডিংয়ের নতুন শিডিউল গণমাধ্যমে প্রেরণ করেছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ৪ থেকে ৬ ঘন্টার লোডশেডিংয়ে হাসফাঁস করতে থাকা জনসাধারণ ১৩ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করার বাধ্যবাধকতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এবার পথে বসার উপক্রম। দিনে ১৩ ঘন্টা লোডশেডিং হলে মানুষ বাসার বাইরে খুব একটা বের হবেনা। এতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বেশী সময় লোডশেডিংয়ের প্রভাবে সকল সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এদিকে রোববারা রাতে ১৩ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের নতুন শিডিউল প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, সিলেট-২।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে সিলেটসহ সারা দেশে এলাকাভিত্তিক ২৪ ঘণ্টায় ১-২ ঘণ্টা করে রুটিন লোডশেডিং করার নির্দেশ দেয় সরকার। এ লক্ষ্যে দিনে ও রাতে ২ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করেছিলো বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, সিলেট। কিন্তু তাদের প্রকাশিত শিডিউলে শুরু থেকে বিপর্যয় দেখা দেয়। প্রথম দিন থেকেই সিলেট মহানগরীর সব এলাকায় ৭-৮ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকছে বলে জানা যায়।
বিউবো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর শিডিউলে দেখা যায়, তাদের আওতায়ভুক্ত এলাকাগুলোর বিভিন্ন স্থানে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘোষিত নতুন শিডিউল অনুযায়ী সোমবার থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১১ থেকে ১৩ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে থাকা এলাকাসমূহ হলো- নগরীর বালুচর, আরামবাগ, আল-ইসলাহ, নতুন বাজার, গোপালটিলা, আলুরতল, টিবি গেট, সোনারপাড়া, মজুমদারপাড়া, পূর্ব মিরাবাজার, দর্জিপাড়া, খারপাড়া, কুমারপাড়া, নাইওরপুল, ধোপাদিধীরপাড়, ঝরনারপাড়, কুশিঘাট, নয়াবস্তি, টুলটিকর, মিরাপাড়া, মেন্দিবাগ, সাদাটিকর, নোওয়াগাঁও, শাপলাবাগ, মেন্দিবাগ, হকার্স মাকেট, কালীঘাট, আমজাদ আলী রোড, মহাজপট্রি, মাছিমপুর, ছড়ারপার, উপশহর ব্লক-এইচ, আই, জে, ই, এফ, জি, সাদাটিকর, রায়নগর, ঝর্নারপাড়, দর্জিবন্দ, বসুন্ধরা, খরাদিপাড়া, দপ্তরীপাড়া, আগপাড়া, কাজীটুলা, মানিকপীর মাজার, নয়াসড়ক, বারুতখানা, জেলরোড, হাওয়াপাড়া, চারাদিঘীরপাড়, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, সোবহানীঘাট, বিশ্বরোড, জেলখানা, বঙ্গবীর, পৌরমার্কেট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, সবুজবাগ, সেনপাড়া, হাতিমবাগ, লামাপাড়া, রাজপাড়া উপশহর ব্লক-এ, বি, সি, ডি, তেররতন, মেন্দিবাগ পয়েন্ট, ডুবড়ীহাওর, নাইওরপুল, ধোপাদিঘীরপাড়, সোবহানীঘাট, বঙ্গবীর যতরপুর, মিরাবাজার, আগপাড়া, ঝেরঝেরিপাড়া, মীরেরচক, মুক্তিরচক, মুরাদপুর, পীরেরচক এলাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী জারজিসুর রহমান রনি বলেন, রোববার সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪৫ মেগাওয়াট এরমধ্যে আমরা সরবরাহ পেয়েছি ৫৯.৫ মেগাওয়াট। প্রতিদিন সরবরাহে এতো ঘাটতি থাকলে লোডশেডিংয়ের বিকল্প নেই। শিডিউল ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিনই সরবরাহ কমছে। ফলে শিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে লোডশেডিংয়ের নতুন শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। এই শিডিউল কতটুকু ঠিক রাখা যাবে সেটা সরবরাহের উপর নির্ভর করবে। শীঘ্রই এই সঙ্কট শেষ হচ্ছেনা বলেও জানান তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, সিলেট মহানগরীর ৫টি অঞ্চলে রোববার বিকেলে চাহিদা ছিলো ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু ওই সময় আমরা সরবরাহ পেয়েছি অর্ধেকের চেয়েও কম। ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিয়ে গ্রাহক সেবা দিতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। তবে আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার লোডশেডিংয়ে মাত্রা কম হলেও শনিবার থেকে নগর এলাকা লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। রোববার এই মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নগর এলাকায় বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি থাকলেও গ্রামাঞ্চলে অবস্থা আরও ভয়াবহ। জেলার অনেক জায়গায় দিনে ও রাতের ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে মোটের উপর ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। ফলে অসহনীয় ভোগান্তিতে রয়েছেন লোকজন।