প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০২১ , ৭:১৪:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার:: গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক ২ ঘটিকার সময় মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার কালনীগড় গ্রামের শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউর পূজা মণ্ডপে একদল দুর্বৃত্ত আক্রমণ করলে উপস্থিত পূজারীবৃন্দের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পূজা মণ্ডপে আক্রমণের বিষয়টি মূহুর্তের মধ্যে গ্রামে জানাজানি হয়ে গেলে এলাকার অনেক হিন্দু লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ায় সময় বাবুল হোসেন (৪৭) নামের এক ব্যক্তি মণ্ডপ ও রাস্তার পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। তখন স্থানীয় রাখাল দাশ (৪০) শীতল চন্দ্র দাশ (২৮) রতন শীল (২৯) পিযুশ দাশ (৩১) ও মানিক লাল দাশ (৩০) সাঁতার কেটে বাবুল হোসেনকে উদ্ধার করে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। এ সময় একপর্যায়ে উপস্থিত জনতার আক্রমণের ভয়ে বাবুল হোসেন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। উপস্থিত ব্যক্তিরা সুচিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত জুড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মৃতের ভাইপো দেলোয়ার হোসেন (৪২) বাদী হয়ে জুড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তার ভাষ্যমতে- রাখাল দাশ, শীতল চন্দ্র দাশ রতন শীল, পিযুশ দাশ ও মানিক লাল দাশ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অন্যায় ভাবে তার চাচাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে।
এদিকে বাবুল হোসেনের মৃত্যুর খবর পেয়ে এলাকার মুসলিম অধিবাসীরা উত্তেজিত হয়ে পরদিন সকালে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উত্তেজিত জনতা কালনীগড় বাজারে হিন্দুদের ৭/৮ টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ঘটনার তীব্রতা দেখে স্থানীয় হিন্দুরা ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে সিলেট ইসকন্ মন্দিরে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু বৃদ্ধ বলেন, দেশে হিন্দু বিদ্বেষ ক্রমাগতই বাড়ছে। ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে যত্রতত্র হিন্দু নির্যাতন করা হচ্ছে। জাতীয় স্বার্থে এগুলো বন্ধ করা উচিত।
কালনীগড় গ্রামের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ধনঞ্জয় দাশ বলেন, কুমিল্লা জেলার একটি গ্রামে পূজা মণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে আক্রমণ চালাচ্ছে কিছু উগ্রপন্থী মুসলমান। আমাদের পূজা মণ্ডপ নিয়েও আমরা অনেকটা আতংকে ছিলাম। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের আশংকাই সত্যি হলো অবশেষে। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় এখন তাদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করছে।