ডেস্ক রিপোর্ট : চলতি বছরের ৮ মাসে দেশী দেশে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে তারা আত্মহত্যা করেন। তাদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন। ২০২২ সালের ৮ মাসে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৩৬৪ জন।
শনিবার অনলাইনে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান: কোন পথে সমাধান’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে এ কথা জানান হয়।
সমীক্ষার তথ্য বলছে, গত ৮ মাসে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৪৫.১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। আর ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ছেলে শিক্ষার্থী ১৪৭ জন, আর মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২১৪ জন।
সমীক্ষায় জানানো হয়, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে আত্মহত্যা করে ৩১.৩০%। খুলনা বিভাগে আত্মহত্যা করে ১৩% এবং চট্টগ্রাম বিভাগে আত্মহত্যা করে ১৪.১০%। রংপুরে বিভাগে আত্মহত্যা করে ৮.৯০%, ময়মনসিংহে আত্মহত্যা করে ১০%, রাজশাহীতে আত্মহত্যা করে ১১.৯০% এবং বরিশালে আত্মহত্যা করে ৮.৩০%। এছাড়া সিলেটে আত্মহত্যা করে ২.৫%।
জানা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি নারী শিক্ষার্থীদের। চলতি বছর আত্মহত্যা করা ৩৬১ জনের মধ্যে ৫৯.৩০% শিক্ষার্থী মেয়ে। বাকি ৪০.৭০% শিক্ষার্থী ছেলে।
নারী শিক্ষার্থীদের বেশি আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখা যায়, ২৬.৬০% নারী শিক্ষার্থী অভিমান করে, প্রেম ঘটিত কারণে ১৮.৭০%, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮.৪০%, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯.৮০%, যৌন হয়রানির কারণে ৫.১০% এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২.৬০% শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
জানা গেছে, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্তর বিবেচনায় দেখা যায় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৪৬.৮% ছিল স্কুলগামী। এদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ১১২ জন এবং ছেলে শিক্ষার্থী ছিল ৫৭ জন। এছাড়া আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে কলেজগামী শিক্ষার্থী ছিল ২৬.৬০%। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছিল ১৮.৩০% এবং আত্মহননকারীদের মাঝে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৮.৩১%।
চলতি বছরে ৩৬১ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩০ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৫৩.৩০%। আর ছেলে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ছিল ৪৬.৭০%। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ৪০% আত্মহত্যার পেছনে কারণ ছিল অভিমান। আর প্রেম ঘটিত সম্পর্কের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩.৩০% এবং ১০% আত্মহত্যার পেছনে দায়ী যৌন নির্যাতন।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আঁচল ফাউন্ডেশন ১১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- আত্মহত্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হটলাইন নম্বর চালু করা, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানো, শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কৌশল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো, পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি এবং সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিতে হবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার-অভিভাবকদের আত্মহত্যা সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে যুগপৎভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।
সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আত্মহত্যার পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যা পরিবারের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক কতটুকু মজবুত তা নিয়ে চিন্তার উদ্রেক করে। ২০২২ সালে আত্মহত্যার পেছনে করোনাভাইরাস একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল। এ বছর করোনাভাইরাস না থাকলেও আত্মহত্যার সংখ্যা আমাদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা হেলাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অভিমান অনেকেই করে, সবাই কিন্তু আত্মহত্যা করে না। আবার অনেকেই প্রেমে ব্যর্থ হয় তারাও সবাই আত্মহত্যা করে না। তাহলে এসব বিষয়ের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত দিব ঠিকই, কিন্তু বিবেচনায় নিবো একজন মানুষের ঘাত সহনশীলতার দিকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উচিত শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনযোগী হওয়া। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।’
Leave a Reply