ডেস্ক রিপোর্ট: জ্বালানী সাশ্রয়ে শিডিউল ভিত্তিক লোডশেডিং শুরুর ৭ দিনের মাথায় দেশে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৩৮০০ থেকে ৪০০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক শিডিউল আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। ১৯ জুন থেকে শুরু হওয়া এ লোডশেডিংয়ের ৭ দিনের মাথায় জাতীয় গ্রিড থেকে প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ঘোষিত লোডশেডিং রোস্টারের মাধ্যমে রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াটের চাপ কমে গেছে। যা ইতিবাচক বিষয়।
তিনি বলেন, প্রত্যেকে যদি নিজের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সাশ্রয় করেন তাহলে এ চাপ আরো অনেকাংশে কমে যাবে। এখন গরমের মৌসুম তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেশি। আশা করছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ চাহিদা ধীরেধীরে কমবে। তখন আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে। সুতরাং অক্টোবরেই বিদ্যুৎ সংকটের অবসান ঘটবে।
সরকারী দপ্তরে বিদ্যুতের সাশ্রয় আদৌ হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে নুরুল আলম বলেন, আমরা প্রত্যেকটা দপ্তরকে অনুরোধ করেছি যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় না করে। আমরা নিজেরা মন্ত্রীসভার স্থানীয় কমিটির মিটিংয়ে যথাসম্ভব লাইট ফ্যান কম চালিয়েছি। সরকার এখন এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে আগাম সতর্কতার জন্য। তবে দ্রুতই সরকার আমদানি প্রক্রিয়া আবার শুরু করবে।
পিডিবির তথ্যমতে মঙ্গলবার দেশে ১৩ হাজার ৮৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিলো ১১ হাজার ৮১০ মেগাওয়াট। ঘাটতির পরিমাণ ২০৪০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে বিপিডির উপপরিচালক শামীম হাসান বলেন, ঠিক কতোটুকু সাশ্রয় হচ্ছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ অনেকগুলো সংস্থা এখানে সংযুক্ত রয়েছে। আমরা প্রতিদিন একটি চাহিদা নির্ধারণ করে উৎপাদন করছি। কিন্তু ঘাটতি থাকছে। বিশ্ববাজার যতোদিন স্থিতিশীল না হচ্ছে, ততোদিন আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো না। তবে শিডিউল লোডশেডিং বা রাত ৮টায় দোকান বন্ধে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। যার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে।
তবে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার মাধ্যমে সরকারের প্রত্যাশিত সাশ্রয় হচ্ছে না। বিপিসি থেকে জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাশ্রয়ের মাধ্যমে মোট জ্বালানি তেল ব্যবহারের মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। দেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। ফলে সরকার পরিবহন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
সরকার আমদানিনির্ভর জ্বালানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে যাতে কোনো সংকট না হয়, সেই লক্ষ্যে আগাম সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। জ্বালানি সাশ্রয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ব্যবহারে ইতোমধ্যে একগুচ্ছ কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে আমদানিনির্ভর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রাখা এবং লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজির) আমদানি স্পট মার্কেট থেকে না কেনা। বিপিসিকে অন্তত ২০ শতাংশ জ্বালানি তেলের আমদানি কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এলাকাভিত্তিক এক দেড় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি মোকাবিলা করা; ভার্চুয়ালি অফিস করা; অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply