নবীগঞ্জ প্রতিনিধি : ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে হবিগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জে এক যুবককে গুমের অভিযোগ করা হয়েছে। অনেক খোঁজাখুজির পর সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সোমবার বিকেলে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন নবীগঞ্জ উপজেলার হরিদরপুর ইমামবই গ্রামের রাইব উদ্দিনের স্ত্রী ছায়া বেগম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার বড় ছেলে ছাদির মিয়া (৩২) কে গত ২০ মার্চ তার নানাবাড়ী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর থেকে থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বার বার আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়রী করতে চাইলেও পুলিশ জিডি নেয়নি। গ্রেফতারের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি আমার ছেলের সন্ধান পাইনি। আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক বন্ধুদের সহায়তা নিতে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমার স্বামী ও সন্তানেরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় স্থানীয় সরকারী দলের এক নেতার ইন্ধনে আমার পরিবার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। আমার সন্তানদের উপর মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একাধিকবার তাদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে। আমার বৃদ্ধ স্বামীকে বার বার লাঞ্চিত করা হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমার ছোট ছেলে সাইস্তা মিয়াকে দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছি। বড় ছেলে ছাদির মিয়াকে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টায় ছিলাম। এর আগেই বড় ছেলেকে গুম করা হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সন্তানকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী আওয়ামী লীগ নেতা আবু সিদ্দিকীর জোর করে আমাদের দোকানের পাশের্^র জায়গা দখল করে নেয়। এর প্রতিবাদে আমার স্বামী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্মরণাপন্ন হলে তারা আমাদেরকে শালিস বৈঠকের পরামর্শ দেন। সেই আলোকে গত ২০/১১/২০২০ইং তারিখে আবু সিদ্দিকের সাথে একটি শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সে জায়গার পক্ষে কোন দলিল দেখাতে পারেনি। এ নিয়ে শালিস নেতৃবৃন্দের সাথে আবু সিদ্দিকী ও তার সন্তানেরা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করে। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বৈঠকে হামলা চালায়। এতে উপস্থিত শালিস ব্যক্তিত্ব সহ আমার স্বামী সন্তানেরা আহত হন। এরমধ্যে শালিস ব্যক্তি আল আমীন গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৫/১১/২০২০ইং তারিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শালিস ব্যক্তিত্ব আল আমীন মারা যান। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই ঘটনায় আমার ২ ছেলেসহ ৭জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় আমার বড় ছেলে ছাদির মিয়াকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আমরা আজ অবধি তার সন্ধান পাইনি। অবিলম্বে তার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন ছায়া বেগম ছাড়াও তার স্বামী রাইব উদ্দিন ও তাদের আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply