নোটিশ:
প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন! মোবা: ০১৫১১ ৬৬৮৪৩৯
হাওরে ভয়ংকর জাল ‘চায়না দুয়ারি’র বিস্তার, হুমকিতে মৎস্য ভাণ্ডার

হাওরে ভয়ংকর জাল ‘চায়না দুয়ারি’র বিস্তার, হুমকিতে মৎস্য ভাণ্ডার

বাদলকৃষ্ণ দাশ ::
‘চায়না দুয়ারি’ নামে ভয়ংকর এক জাল ছড়িয়ে পড়েছে হাওরাঞ্চলে। হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসের এই জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছ, পোনা। কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে পারায় কারেন্ট জালের চেয়েও বিপজ্জনক এই জাল অসাধু জেলেদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে হাওরের মৎস্য ভা-ার।
সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে এসব জাল ধ্বংস করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান রনি। এরকম প্রায়ই অভিযানের পরও থেমে নেই এই জালের বিস্তার। এসব জাল নিয়ে হাওরে অবাধে বিচরণ করছে অসাধু জেলেরা।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা শামসুল আলম জানান, কিরণমালা, কারেন্টের জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও চায়না দুয়ারি জাল দামে সস্তা, ওজনে হাল্কা ও দ্রুত মাছ ধরায় জেলেদের পছন্দ এটি। সাম্প্রতিক সময়ে হাওরে মাছ শিকারের জন্য চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এই জাল একেবারে নিখুঁতভাবে মাছ ধরতে সক্ষম। এই জালে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম। যে কারণে এতে যে কোনো মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। সুনামগঞ্জে অবাধে চায়না দুয়ারি জাল বিস্তারে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে।
হাওরের জেলেদের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মাছ ধরার অন্যান্য উপকরণের মধ্যে চায়না দুয়ারি জালের মাছ ধরা সহজ। নদী, প্লাবনভূমি, হাওর সর্বত্র এই জালটি সহজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই জালের দুই পাশে দুই হাত পরপর লোহার তৈরি গোল রিং পরানো থাকে। তার মাঝখানে এক হাত পর পর ৩০টির মতো চারকোণা রিং পরানো। চারকোণা রিংয়ের মাঝে একটি করে দুয়ার রয়েছে। এসব দুয়ার দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণি একবার ঢুকে পড়লে বের হতে পারে না। এই জালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পানির তলদেশে লম্বালম্বিভাবে পড়ে থাকে। ফলে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুই দিক থেকে মাছ ও জলজ প্রাণি জালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ৪০ হাত লম্বা ভাল মানের চায়না দুয়ারি জাল প্রতি পিস ৩৮০০-৩৯০০টাকা। এর চেয়ে একটু নি¤œমানেরটি প্রতি পিস ৩৫০০-৩৬০০ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এক ফাঁদ হচ্ছে চায়না দুয়ারি জাল। এই জাল এমনভাবে বোনা হয়েছে যে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম। মূলত মশারি তৈরির নেটের আদলে এই জাল বোনা। এ জন্য এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না।
জেলেদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, চায়না দুয়ারি নামে পরিচিত এই জাল দেশেই উৎপাদিত হয়। তবে জালের সুতা সূক্ষ্ম আর মিহি বলে অনেকের ধারণা, এই জালের সুতা চীন থেকে আমদানি করা হয়। তাই জালটির নামের সঙ্গে ‘চায়না’ শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ এই জালের দুই মাথা খোলা বলে একে ‘দুয়ারি’ বলা হয়। মান এবং দৈর্ঘ্যভেদে চায়না দুয়ারির আকার নির্ধারিত হয়। সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ এই জাল। প্রস্থে এক থেকে দেড় ফুট আর এর গিঁট বা ফাঁস এতই ক্ষুদ্র যে পানি ছাড়া আর কোনো কিছু বের হতে পারে না। জালের মধ্যে দেওয়ার জন্য লোহার চারকোণা রড দিয়ে অনেকগুলো ফ্রেম বসিয়ে এই জাল তৈরি করা হয়। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। ফলে কোনো মাছ একবার জালে ঢুকলে আর বের হতে পারে না।
হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সভাপতি মিজানুর রহমান রাসেলসহ বিভিন্ন সংগঠনগুলোর দাবি হাওর এলাকায় চায়না দুয়ারি জালসহ মৎস্য স¤পদের ক্ষতিকর মাছ ধরার চাঁই ও জাল ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও মৎস্য আইন গুরুত্ব সহকারে প্রয়োগ করতে না পারল মিঠাপানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে এবং হাওরের নানা জলজ প্রাণি ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামছুল করিম বলেন, বর্ষাকালে পানিতে মাছে যখন প্রজননের জন্য ছড়িয়ে পড়ে তখন এই জালে ডিমওয়ালা মাছসহ নির্বিচারে সব বয়সের মাছ আটকা পড়ে। এই জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় গোপনে ও লুকিয়ে সারাদেশেই ব্যবহার হচ্ছে। এই জাল বিক্রয়কারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাসুদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ, জলজপ্রাণী ও মাছের জন্য ক্ষতিকর জাল বিক্রি করবে ও ব্যবহার করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার বিভিন্ন হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেক জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। মৎস্য স¤পদ রক্ষায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved © 2022 Todaysylhet24.com
Desing & Developed BY DHAKATECH.NET