নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিককালে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবার। এতে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেট জেলার ৪০ হাজারের বেশী ঘরবাড়ী। পানিবন্দী ছিলেন জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। ১ম কিস্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ৫ হাজার পরিবার। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্যদেরকেও আর্থিক অনুদান দেয়া হবে।
চলমান বন্যায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ জেলার ১৩ টি উপজেলার ১০৮ টি ইউনিয়ন ও ৫ টি পৌরসভা প্লাবিত হয়। পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রথম কিস্তিতে সিলেটের ৫ হাজার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ১০ হাজার করে টাকা। ১ম কিস্তিতে বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি একেবারে ভেঙ্গেছে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে এই টাকা।
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বন্যা পরিস্থিতি, বন্যাত্তোর পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
জেলা প্রশাসক বলেন, সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুদানের এই টাকা বিতরণ শুরু হবে। মূলত এবারের বন্যায় যেসব পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরকেই এই টাকা প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত ৫ কোটি টাকা আমাদের একাউন্টে জমা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নিবার্হী অফিসারদের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার ব্যক্তি যাদের ঘর-বাড়ি বিধস্ত বা আংশিক হয়েছে সেই সকল দরিদ্র মানুষের তালিকা আমরা পেয়েছি। আমিসহ উপজেলা কর্মকর্তাবৃন্দ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেব। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার ১ম পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেট সিটিকর্পোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের মাধ্যমে উপদ্রæত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বোতলজাত পানি সংগ্রহ কওে বন্যাদুর্গতদেও মধ্যে সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৭টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ৮টি উপজেলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়। এ কার্যক্রম বর্তমানে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর ও ওসমানীনগর উপজেলায় অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য বন্যার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২৪৬টি জেরিকেন (১০লিটার), ১ হাজার হাইজিন কিট, ২ হাজার ৯০০কেজি বিøচিং পাউডার, ১৩ লক্ষ ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। ৫৫৬টি নলক‚প জীবানুমুক্তকরণ, ২৩০টি নলক‚প মেরামত এবং ৩১৮টিনলক‚প উচু করা হয়েছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ৩লক্ষ ৮০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ১৪০ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসন আরো জানায়, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, সরকারী ও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ কোটি ৪৭৮ লক্ষ নগদ টাকা, ১০ লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য, ১০ লক্ষ টাকার গোখাদ্য ও ২০ হাজার ২১৮ বস্তা শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এখনো জেলার কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য নগদ ৫০ লক্ষ টাকা, ৫০০ মেট্রিক টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ও গোখাদ্যের জন্য আরো ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সিলেট জেলাপ্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে বেসরকারীভাবে নগদ ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ টাকা, ৫১ হাজার ৮২৫ প্যাকেট শুকনো খাবার, ২২ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৩ টন চাল, ১০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন, ১ হাজার ২০০ টি মোমবাতি, ১০০ টি গ্যাসলাইট, ৬০০ প্যাকেট শিশুখাদ্য ও ১০ টি নৌযান জমা হয়। যা ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply