নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলেটে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। গেল ২৪ ঘন্টায় বিভাগে ৪ জন নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হন ৪ জন। নভেম্বর মাসের ৩ দিনে সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। বর্তমানে সিলেটজুড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৪ জন ডেঙ্গুরোগী। এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ জন ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪ জন ডেঙ্গুরোগী। এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত শনাক্ত হন আরো ৪ জন। সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শনাক্ত হন ৩ জন। বিশেষ করে নভেম্বর মাসের টানা ৩ দিনে সিলেটে শনাক্ত হয়েছেন ১১ জন।
এদিকে গেল অক্টোবর মাসে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হন ৫৯ জন। এর আগে চলতি মওসুমের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০ জন। বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮০ জনের মধ্যে ৬০ জন সিলেট জেলার, ৫ জন সুনামগঞ্জ জেলার, ৬ জন হবিগঞ্জ জেলার ও ৯ জন মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৬৬ জন ডেঙ্গুরোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৪ জন। বিভাগে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে সিলেটে ৯ জন, সুনামগঞ্জে ১ জন, হবিগঞ্জে ২ জন ও মৌলভীবাজারে ২ জন রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেক স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ধরে নেয়া যায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমিউনিটি পর্যায়ে চলে গেছে।
এদিকে সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, জোরদার হচ্ছেনা ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম। নগর এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রুটিন মাফিক অভিযান পরিচালনা হলেও বড় কোন অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। এজন্য অর্থ বরাদ্দ ও জনশক্তির সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন সিসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আপাতত নগরীর বিশেষ কিছু চিহ্নিত স্থানে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে এডিসের লার্ভা ধ্বংসের অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। তবে বাসা বাড়ী সহ অধিকাংশ এলাকা অভিযানের বাইরে থাকায় ডেঙ্গু মশা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিসিকের পক্ষ থেকে আমাদের রুটিন মাফিক লার্ভা ধ্বংস ও মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে বর্তমানে খুব বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছেনা। তবে চলতি সপ্তাহে আমরা আবার মাইকিং শুরুর পাশাপাশি বড় ধরনের অভিযানে নামতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের অভিযান যত বড়ই হোক না কেন আমরা মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ মশক নিধন ও লার্ভার স্থান চিহ্নিত করতে পারি। বাসা-বাড়ী সহ সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে আমাদের অর্থ এবং জনশক্তির বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। নিজ দায়িত্বে বাসা-বাড়ী ও দোকান পাঠের আঙ্গিনায় জমে থাকা পানি পরিস্কার রাখতে হবে। মশার বংশবিস্তার হয় এমন স্থানগুলো পরিস্কার করতে হবে। কোথাও এডিসের লার্ভা দেখা গেলে আমাদেরকে জানালে আমরা লার্ভিসাইড দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করার ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে সিলেটেও বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। তবে আশার দিক হচ্ছে সিলেটে এখনো ডেঙ্গুতে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি। আমরা স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। নগর এলাকায় এডিসের লার্ভা ধ্বংস করার সিস্টেম থাকলেও জেলা-উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখনো এডিসের লার্ভা ধ্বংসের প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছেনি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর বিষয়টি বাস্তবায়ন করে থাকে।
তিনি বলেন, আমরা সিলেট বিভাগের সবগুলা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ডেঙ্গুজ¦রের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির আহ্বান জানিয়েছি। জ¦র হলে শুরুতেই এন্টিবায়েটিক না খেয়ে ২ দিন সাধারণ প্যারাসিটামল ও নাপা খেতে হবে। ২দিন পর যদি কারো বেশী বমি, রক্ত বমি, শরীর ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাধঁতে দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। আতংকিত না হয়ে সচেতন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাসা-বাড়ী ও দোকানপাঠের আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে।
Leave a Reply