নোটিশ:
প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন!
শিরোনাম
জামালগঞ্জে ৪র্থ পর্যায়ে মুজিববর্ষের গৃহ পাচ্ছেন ২’শত জন শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা নাজিরেরগাঁও’র পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শিমুলের পিতার মৃত্যুতে খন্দকার মুক্তাদিরের শোক বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড রেকর্ডময় ম্যাচ সিলেট বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ৩ হাজার পরিবার রুবেল বক্স ও শিমুলের পিতৃবিয়োগে সিলেট মহানগর বিএনপির শোক গোয়াইনঘাটে ডিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন কানাইঘাটে সন্ধিপন এডুকেশন ট্রাস্টের এইচএসসি উত্তীর্ণ সংবর্ধনা সিলেট জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাই হলো যাদের সুরমা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে জামালগঞ্জের বিস্তীর্ণ লোকালয় ফসলি জমি
শিক্ষার নতুন কারিক্যুলামে অনিশ্চয়তায় প্রাথমিক পর্যায়

শিক্ষার নতুন কারিক্যুলামে অনিশ্চয়তায় প্রাথমিক পর্যায়

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী শিক্ষাবছর থেকে প্রি-প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত চালু হবে নতুন কারিক্যুলাম। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এই শিক্ষাক্রমকে বলা হচ্ছে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি’। এই শিক্ষাক্রমে শিখন পদ্ধতির পাশাপাশি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও আসছে পরিবর্তন। কিন্তু নতুন কারিক্যুলামের সঙ্গে পরিচিত করাতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ন্যূনতম কোন প্রস্তুতি নেই। এমনকি ম্যানুয়ালও তৈরি হয়নি।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) ও সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষা) মো. মশিউজ্জামান বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আর আগের মত থাকছে না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের মাধ্যমেই শিখবে তাও থাকছে না। শিক্ষকরা অনেকটাই সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবেন। শিক্ষার্থীরা পরিবার, সমাজ, সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষদের থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখবে। আগের মত পরীক্ষা পদ্ধতিও থাকছে না। এখন মূল্যায়নপদ্ধতিও বদলে যাচ্ছে। তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও সাজানো হয়েছে সেভাবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও সাজানো হয়েছে অ্যাক্টিভিটি বেজড।

নতুন কারিক্যুলাম সম্পর্কে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ও শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের মাধ্যমেই নয়, শিখবে নানান মাধ্যমে। শিখন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে নিজে খুঁজে দেখা, বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন, পাঠ্যবই ছাড়াও অন্যান্য বই ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ। আরও থাকছে শিক্ষক ছাড়াও পরিবার, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির কাছ থেকে শেখা। এছাড়াও চারু ও কারুকলায় যুক্ত হচ্ছে নাচ, গান ও অন্যান্য শিল্প ও সাংস্কৃতিক চর্চা। এমনকি কেউ খেলাধুলা, সাঁতার বা নেতৃত্ব গুণাবলী প্রদর্শন করলেও তার যুক্ত হবে মুল্যায়নে। আগের মতই বছরে একাধিক মূল্যায়ন পরীক্ষা থাকলেও সারাবছর অর্জিত অভিজ্ঞতার উপর গ্রেড পয়েন্ট অর্জন করবে শিক্ষার্থীরা।

আর নতুন এই কারিক্যুলামের সঙ্গে পরিচিত করাতে চলছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। তবে নানা ধাপের এই প্রশিক্ষণে দেখা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। শিক্ষাবিদদের মতে শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ প্রাথমিক পর্যায়। এই পর্যায়ে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবনের ভিত গড়ে তোলা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও কাঠামোবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা হলেও নতুন শিক্ষা কারিক্যুলাম অনুযায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এক লাখ আঠারো হাজার শিক্ষকদের কবে আর কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা নিয়ে এখনও কিছুই নিশ্চিত না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। সারা দেশের সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত শিক্ষক আড়াই লাখ। ’মাস্টার প্রশিক্ষক’ তৈরি, অনলাইনে প্রশিক্ষণ ও মুখোমুখি প্রশিক্ষণ- এভাবে কয়েক ধাপে চলছে এই কার্যক্রম।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০১টি। শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। আর প্রাক-প্রাথমিক শাখার শিক্ষকের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৮৯৫ জন।

এই দুই কোটির বেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নির্ভর করছে প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উপর। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, নতুন কারিক্যুলামের সঙ্গে পরিচিত করাতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ন্যূনতম কোন প্রস্তুতি নেই। এমনকি ম্যানুয়ালও তৈরি হয়নি। এগুলো তৈরি হলেই প্রশিক্ষণের দিন-তারিখ নির্ধারণ হবে। সে অনুযায়ী দেশের ৬৭টি পিটিআই ও ইউআরসি (উপজেলা রিসার্চ সেন্টার)-র মাধ্যমে একযোগে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অন্যদিকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের নিয়ে চলছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এরমধ্যে রয়েছে ৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নয়টি মাদরাসা ও দুটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সাবজেক্ট ম্যাটার স্পেশালিস্ট, পেডাগজি স্পেশালিস্ট এবং এনসিটিবির প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি প্রশিক্ষক প্যানেল বর্তমানে জেলা পর্যায়ের ও পাইলট প্রোজেক্ট্রের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষক তৈরি করা হচ্ছে। চলতি মাসে (১২ নভেম্বর) শুরু হয়েছে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক তৈরির কাজ। এ জন্য জেলা পর্যায়ে বাছাই করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬ জন শিক্ষককে, উপজেলা পর্যায়ে এ সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষকরা ১৮-২২ ডিসেম্বর সারাদেশে চার লাখ শিক্ষককে একযোগে প্রশিক্ষণ দিবেন।

অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এখান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সার্টিফিকেট অর্জনকারীরা পরে অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক আরও একটি প্রশিক্ষণ নেবেন।

এদিকে, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রশিক্ষণ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, এখানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ বিষয় পড়ানো হয়। সাড়ে আট হাজার আলিয়া মাদরাসায় সাধারণ বিষয়ের শিক্ষক আছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে। দেড় মাস ধরে অনলাইনে তাদের প্রশিক্ষণ চলছে।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কতটা কার্যকরী হবে তা ভবিষ্যত তদারকির উপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। মেন্টর ও মনিটরিং গ্রুপের কার্যক্রম শুরুতেই ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও আশঙ্কা করছের তিনি। এই সংকট সমাধানে মেন্টর ও মনিটরিং গ্রুপের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে একটি জাতীয় কমিটি করার পরামর্শ দেন এই শিক্ষাবিদ। জাতীয় পর্যায়ে এই মনিটরিং গ্রুপ মাঝেমধ্যে ঝটিকা সফরের মাধ্যমে দেখবেন শিখন প্রক্রিয়া ঠিকভাবে চলছে কিনা। এরপর তারা মতামত ও পর্যবেক্ষণ দেবেন। শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতা আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে এই কমিটি তৈরি করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এই শিক্ষাক্রম নিয়ে আশাবাদী সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম নতুন শিক্ষাক্রমের সফলতার জন্য ছয়টি পরামর্শ দেন- ১) শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি। ২) শিক্ষকদের মর্যাদা, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষকতাকে দেশের এক নম্বর পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। ৩. শিক্ষা প্রশাসনকে বিশেষায়িত করা। অন্য ক্যাডার থেকে নয়, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় জড়িতদেরই শিক্ষার প্রশাসনিক পর্যায়ে আনা। ৪) শিক্ষার সকল ধাপে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। ৫) একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। ৬) প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার প্রতিটি ধাপ পার করার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ থেকে শুরু করে সবকিছু স্কুলেই হবে। বাসায় যেয়ে গল্পের বই বা অন্য কাজ করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved © 2022 Todaysylhet24.com
Desing & Developed BY DHAKATECH.NET