নোটিশ:
প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন! মোবা: ০১৫১১ ৬৬৮৪৩৯
বাজার থেকে উধাও সয়াবিন।

বাজার থেকে উধাও সয়াবিন।

দাম বৃদ্ধির পরও ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দোকানে দোকানে সরবরাহ বাড়েনি। উলটো কারসাজিবাজদের চক্রান্তে প্রায় উধাও সয়াবিন তেল। শুক্রবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হলেও অধিকাংশ দোকানে মিলছে না বোতলজাত তেল। দু-এক জায়গায় গোপনে নতুন দামের চেয়ে অনেক বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তেলের সন্ধানে দোকান থেকে দোকানে ঘুরছেন ক্রেতা। এদের বেশিরভাগই হতাশ হয়ে ফিরছেন শূন্য হাতে।

এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরে চার জাহাজ থেকে ৪৭ হাজার টন বা ৪ কোটি ৭০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল খালাস শুরু হয়েছে। একাধিক আমদানিকারক এসব তেল এনেছেন। এর দুটি জাহাজে রয়েছে অপরিশোধিত সয়াবিন। অপর দুটিতে পাম অয়েল। খালাস শেষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের রিফাইনারি বা ডিপোতে নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে তেল বাজারজাত করবে।

এদিকে মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাবে সায় দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল নেই। এক ও দুই লিটারের বোতলও প্রায় নেই বললেই চলে। দু-একটি দোকানে খোলা ও এক লিটারের বোতলজাত তেল মিললেও দাম আকাশছোঁয়া। শুক্রবার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি।

এমন অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু অসাধু মিল মালিক ও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আরও লাভের আশায় নতুন করে দাম বেঁধে দেওয়ার পরও চক্রটি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর নয়াবাজারে গিয়ে কোনো দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। কয়েকটি দোকানে এক লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও দাম ২০০-২১০ টাকা। খোলা সয়াবিন ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বোতলজাত প্রতিলিটারের দাম ১৯৮ ও খোলা সয়াবিনের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাজারে তেল কেনা-বেচা নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়।

ক্রেতাদের তোপের মুখে পড়ে কোনো কোনো বিক্রেতা অল্প কিছু পাঁচ লিটারের বোতল বের করেন। তবে দাম চাওয়া হয় ১০৫০ টাকা, যা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হালিমা বেগম বলেন-বাজারে ভোজ্যতেল নেই, তা বলা যাবে না।

বিক্রেতারা বাড়তি দাম নিতে দোকানের পেছনে মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। বাড়তি টাকা গুনলেই এক লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই পণ্যটির দাম হু-হু করে বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। তার মধ্যে বিক্রেতারা সংকট তৈরি করে রাখায় আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তারা হিমশিম খাচ্ছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে।

নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, দাম বাড়ানোর পরও মিল থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। কোম্পানির গাড়ি আজও (শুক্রবার) আসেনি। যে কারণে বাজারে তেলের সংকট রয়েছে। তবে কিছু বিক্রেতা আগের তেল বিক্রি করছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে তেল কিনতে এসে যাতে ক্রেতার ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্ধারিত দামে যাতে তেল কিনতে পারে সেজন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি যারা তেল নিয়ে কারসাজি করছে তাদের চিহ্নিত হরে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, মিল পর্যায় থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে কয়েকদিনের বাজার তদারকি করতে গিয়ে দেখেছি-খুচরা বিক্রেতারা তেল অবৈধভাবে মজুত করেছেন। তারা দোকানে দৃশ্যমান জায়গায় তেল রাখছেন না। এতদিন বেশি দামে বিক্রির আশায় দোকানের পেছনে বা বস্তায় ভরে তেল মজুত করেছেন। অভিযানকালে আমরা তা হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় এনেছি। তবে এবার যেহেতু নতুনভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই দরে তেল বিক্রি হচ্ছে কিনা তা আমরা তদারকি করছি। অনিয়ম পেলেই সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।

দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কম দেখা গেছে। বিক্রেতাদের কাছে পাঁচ লিটারের বোতল নেই। যে দু-একটি দোকানে ছিল সেখানে এক ও দুই লিটারের বোতল দেখা গেছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিনের সরবরাহও কম লক্ষ করা গেছে। তবে খোলা ও বোতলজাত তেল বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি হয়নি। কাওরান বাজারে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। আর খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকা।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা মো. হাকিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য কয়েক মাস ধরে দেশে তেলের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। তবে এই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়েও ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করেছে। সঙ্গে বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি থাকলেও এই সুযোগ পাওয়ার পরও দেশে তেলের দাম বাড়ার কথা নয়।

সরকারের এতসব সুযোগের পর তেল কিনতে ক্রেতার স্বস্তিতে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ক্রেতাই সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছেন। আর সুবিধা যা নেওয়ার আমদানিকারক ও উৎপাদকরা পেয়েছেন। তারা এই তিন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট না দেওয়ায় অল্প দামে তেল আমদানি ও বাজারজাত করতে পারছেন। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারে দাম বাড়িয়েই চলেছেন।

তিনি বলেন, দাম যদি বাড়ে তবে সেটা হবে বাড়তি দামে কেনা তেল দেশে আসার পর। কিন্তু এখনই বাড়ছে কেন। তিনি বলেন, বাড়তি দামে কেনা তেল দেশে আসতে আরও তিন-চার মাস লাগবে। আর দাম বাড়ানোর পরও মিল থেকে তেল সরবরাহ বাড়ানো হলো না কেন। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এলসি কমিশন ও মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়। এরপরও বাজারে তেলের দাম কমেনি বরং বেড়েই চলছে।

তবে মিল মালিক ও আমদানিকারকরা জানান, বিশ্ববাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ১২০০ থেকে বেড়ে ১৮০০ ডলারে উঠেছে। এখন কিছুটা কমলেও ১৬০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জাহাজ ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে। ফলে সবকিছু বিবেচনা করে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved © 2022 Todaysylhet24.com
Desing & Developed BY DHAKATECH.NET