নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে নাড়ীর টানে সিলেট শহর ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। প্রতিবারের মতো এবারও পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছেন চাকরিজীবীরা। সাথে সাথে গ্রামমুখী শ্রমজীবি মানুষ। মুসলামনদের সব থেকে বড় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এবার সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৫ দিন।
রমজানের প্রথম কিছুদিন মানুষের যাতায়াতে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও ঈদ ঘনিয়ে আসায় বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশনগুলোতে বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। তবে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সিলেটের পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ৫ দিন নিয়মিত ৩ হাজার বাসে যাত্রী পরিবহন হবে। বাসপ্রতি গড়ে ৪০ জন যাত্রী হলেও দিনে ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। এতে ৫ দিনে ৬ লাখ মানুষ শুধু বাসেই সিলেট ছাড়বে।
সিলেট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ট্রেন। এই অঞ্চলের মানুষ বিভাগীয় ভিন্ন জেলায় যাতায়াতেও ব্যবহার করেন এই বাহনটি। এছাড়াও আছে ভাড়া ও ব্যক্তিগত গাড়ি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর কুমারগাও বাসস্ট্যান্ডে মানুষের স্রোত। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ ও দিরাইমুখী একের পর এক বাস ছেড়ে যাচ্ছে। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইন ধরে দাঁিড়য়ে টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
এদিকে নগরীর কদমতলী টার্মিনালেও যাত্রীদের ভীড় দেখা গেছে। টার্মিনাল থেকে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ জেলায় একের পর এক বাস ছেড়ে যাচ্ছে। সর্বত্র ঘরমুখো মানুষের ভীড়। একই সাথে কদমতলী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দূর পাল্লার বাসেও যাত্রী ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলের ঈদযাত্রায় এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। সেইসাথে প্রথমবারের মতো সিলেট-চাঁদপুর রুটে একজোড়া ‘স্পেশাল ট্রেন’ চলাচল শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ দিনে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করছে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন। তবে এর সঙ্গে আরও দেড় লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র বলেছে, স্বাভাবিক সময় সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করে। ঈদের সময় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ঈদের আগের পাঁচ দিনে ১০ লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগ, এসএমপি, সিলেট কর্তৃক নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাসগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট মহানগরীর কদমতলী বাসস্ট্যান্ড ও হুমায়ুন রশিদ চত্বর এলাকায় দূরপাল্লার প্রতিটি বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাস ছাড়ার পূর্বে যাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর টিকেটে সংরক্ষণ রাখতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি যাত্রীর ভিডিও ধারণ করে রাখতে সংশ্লিষ্ট বাস কাউন্টারে অনুরোধ করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা এবং চালকদের নির্ধারিত ট্রিপ শেষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাটি।
অপরদিকে আসন্ন ঈদুল ফিতরে সিলেট থেকে সড়ক পথে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে নিরাপদ সড়ক (নিসচা), সিলেট এসএমপি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ সিলেট বিভাগীয় অফিসের যৌথ উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় টার্মিনালে প্রতিটি বাস কাউন্টারের স্টাফ, বাসচালক ও হেলপারদের ঈদযাত্রায় বেপরোয়া ও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গাড়ি না চালানোর আহ্বান জানানো হয়। কোনো চালককে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত গাড়ি চালাতে না দেওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে গাড়ি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও গাড়ির ছাদে যাতে কোনো যাত্রী বহন করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান করা হয়। এ সময় যাত্রীদের উদ্দেশ্যে চালকদের বিরক্ত না করে একটু বেশি সময় হাতে নিয়ে বাড়ি উদ্দেশ্য যাত্রার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধের বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত রাখতে বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ নজরদারি রাখাতে সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার, র্যাব অধিনায়ক ১৯, ৪৮ বিজিবি, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর), এসএমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলার অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply