ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ জন শিশু, আর ১৮ বছরের কম বয়সী ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কমিউনিটি ভিত্তিক সচেতনতা জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশন (এনএডিপি) পরিচালিত ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় ক্যাম্পেইনের বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে এনএডিপির আহ্বায়ক সদরুল হাসান মজুমদার পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ এবং এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা ও দেখাশোনার (সুপারভিশন) অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় ৬০ ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। কারণ এ সময়টার ভেতরে শহর ও গ্রামে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিশেষ করে বাবা-মা এবং নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যান। তবে এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক সুপারভিশনের (ডে কেয়ার সেন্টার) ভেতরে রাখা যায় তাহলে ৮০ ভাগ শিশু মৃত্যু বন্ধ করা যায়।
সদরুল হাসান বলেন, যে পরিবারে শিশুর সংখ্যা অধিক সেসব পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে এবং এটা প্রমাণিত, তাই সচেতনতার জায়গাটা খুব দরকার। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সামগ্রিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধে প্রথমেই সাঁতারের কথা চিন্তা করা হয়। কিন্তু সাঁতার মনে হলেই সেটাকে একটি স্পোর্পস হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সাঁতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরক্ষাকারী দক্ষতা, কেবলই খেলাধুলা নয়।
গবেষণায় এসেছে, একটি শিশুকে যদি সাঁতার শেখানো যায়, তাহলে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ঝুঁকি কমে যায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর।
পানি থেকে তোলার পরও সঠিকভাবে চিকিৎসা না হওয়ার কারণে অনেক শিশু শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানিয়ে সদরুল হাসান মজুমদার বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে তোলার পর কিছু অবৈজ্ঞানিক-পুরাতন প্র্যাকটিসের মাধ্যমে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। সেটা করতে গিয়ে মৃত্যুকে আরও ত্বরান্বিত করা হয়। কিন্তু শ্বাসনালীতে যাওয়া পানিটা যদি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে (সিপিআর) বের করা যায় তাহলে তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। আবার পানি থেকে উদ্ধার করারও যে বৈজ্ঞানিক উপায় রয়েছে, সেটাও আমাদের জানা নেই। অথচ পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণে হোক, অকারণে হোক, অসচেতনতা বা অবহেলা করেও হলেও এখন আর তাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
তাই পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি মাল্টি সেক্টরাল স্টেকহোল্ডারদের ভেতরে সমন্বয় করতে হবে। সেই সঙ্গে একে কেবলমাত্র এনজিওভিত্তিক কার্যক্রম হিসেবে না দেখে একে আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে, যাতে করে সমাজে এর প্রভাব পড়ে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনএডিপির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো আবদুল জলিল।
অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার এনজিও প্রতিনিধিরা এবং জেলার স্থানীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আট বিভাগের সমন্বয়কদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. রহিমা সুলতানা কাজল এবং রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক তপন কুমার কর্মকার।
পানিতে ডুবে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাইলা ইমাম কান্তা।
উপদেষ্টাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লিঙ্গ বৈষম্য ও নারী বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট সেলিনা আহমেদ এনা এবং মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল কালাম মো. হুমায়ূন কবির।
আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. ইশাকুল কবির, মামালা ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. মোশাররফ তানসেন। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ। আগামী পাঁচ বছর পুরো বাংলাদেশে এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে।
Leave a Reply