নোটিশ:
প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন! মোবা: ০১৫১১ ৬৬৮৪৩৯
তারা আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে : প্রধানমন্ত্রী

তারা আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে অভিযোগ করে বলেছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। তবে তারা আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই লেখাগুলো ছাপাল; কিন্তু সূত্র লেখা হলো না কেন?’ তারা আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে।

তিনি আরও বলেন,  ‘ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো’ এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে বলেছেন, এদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। কোনোভাবে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের কপাল খুলবে—সে ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের অগ্রগতি রুখতে পারবে না।

একইসঙ্গে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। এ ভুলের খেসারত কেন এ দেশের জনগণ দেবে? এর খেসারত তাদেরই দিতে হবে। আর সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও নাশকতার জন্য মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এ সন্ত্রাস, খুন-খারাবি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি এগুলো মানুষ পছন্দ করে না।

সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের সমাপনী দিনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায়ও অংশ নেন।

‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার’ পত্রিকার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি পত্রিকায় গত ২০টি বছর ধরেই আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভালো কিছু লিখলেও শেষের দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়ব কেন?’

তিনি বলেন, ‘একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বীকার করেছেন—ওয়ান-ইলেভেনের পর আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তার পত্রিকা যত কিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইর ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউ-ই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্য ছিল প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামের?’

তিনি বলেন, ‘এই দুটি পত্রিকা হয় ডিজিএফআইর এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে, নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিল ওই দুটি পত্রিকা। তাদের কাজই হলো দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, তারা চায় অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে আমরা রাজনীতি করি। রাজনীতি করার এত শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এত শখ থাকলে মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজনও জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। একজন সম্পাদক তার পক্ষে লোক জোগাতে নেমেছিলেন; কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম। আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করলেন, মামলায় হারলেন—আর সব দোষ শেখ হাসিনার ওপর। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়ল পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।’

বিএনপিকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এখনও যারা নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে, তাদের গোড়া এক। ছাত্রজীবনে হয় শিবির না হয় ছাত্রদল করেছে।’

এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী-জঙ্গি কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় ও অপরাধী ধরতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

সুষ্ঠুভাবে সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘অন্তত এখন মানুষ সংসদের কার্যবিবরণী কান পেতে শুনতে পারে। অতীতের বিরোধী দল বিএনপি সংসদে যেভাবে খিস্তি-খেউড়, হুমকি-ধমকি ও অশ্লীল কথাবার্তা বলেছে—এখন সেটা নেই। বর্তমান বিরোধী দল সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সংশোধনের সুযোগ করে দিচ্ছে। সংসদে তারা গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে।’

শিশুহত্যাকারীদের যেন দেশের আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সামান্য কারণে শিশুহত্যা করে তারা সমাজের ঘৃণ্য জীব। এর আগে কয়েকজন শিশুহত্যাকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ জানাব, শিশুহত্যাকারীদের যেন তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিশুহত্যার সাহস না পায়।’

পাড়া-মহল্লায় শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই শিশুহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এত ছোট ছোট শিশুর প্রতি এমন নিষ্ঠুর জিঘাংসা কেন? এসব খুনি সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব, এদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানাব, শিশুহত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিরা কেউ পালিয়ে থাকলে তাদের ধরিয়ে দিন, সরকার তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে।’

সম্প্রতি গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকে রয়েছেন একটিমাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটি কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।’ আর যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানে জানালার দরজা খুলে রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

রাস্তায় বের হয়ে দেশের মানুষ কেমন আছে তা দেখে আসতে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেশের অবস্থা আগের মতো নেই। এখন প্রযুক্তির যুগ। এখন কোনো কিছু দেখতে নিজে যেতে হয় না। কাউকে একটি মোবাইল দিয়ে পাঠালে ঘরে বসেই সবকিছু দেখা যায়। আমি ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টুঙ্গিপাড়ার মাজার দেখতে পাই, অনেক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের কোনো মানুষ যেন ফুটপাতে না থাকে, ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত না থাকে, সেই নির্দেশ দিয়েছি। সমস্যা হচ্ছে, এসব মানুষকে নিয়ে গিয়ে আমরা ভালো রাখলেও পরে বেরিয়ে এসে সেই পুরনো কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের কেউ আর বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না। দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এ দেশ আমাদের। আমরাই এ দেশকে গড়ব, আমরাই উন্নত করব। আমরাই পারব। কেননা আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি।’

প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যের শুরুতে সংসদের নবম অধিবেশনের সূচনা দিনে গত ২০ জানুয়ারি সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানান। এই ভাষণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ও ভাষণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে সরকারের গত এক বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন। তার এই মূল্যবান ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যার মাধ্যমে দেশ যে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটিই প্রমাণ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপ্তি সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved © 2022 Todaysylhet24.com
Desing & Developed BY DHAKATECH.NET