নোটিশ:
প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, আগ্রহীগণ যোগাযোগ করুন! মোবা: ০১৫১১ ৬৬৮৪৩৯
জামালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা রসাতলে শিক্ষায় ফাঁকি

জামালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা রসাতলে শিক্ষায় ফাঁকি

বাদল কৃষ্ণ দাস:: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা দিনে দিনে রসাতলে নিমজ্জিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার মতো বুনিয়াদি এই ব্যবস্থার মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর হুলিয়ায় বিদ্যালয় ছাড়ার পর থেকেই ফাঁকিবাজ শিক্ষকরা উপজেলা সদরে অব্যাহত আয়েসি জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় এমনটি হয়েছে বলেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা মন্তব্য করে আসছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ উপজেলা সদরে অবস্থান করায় এবং দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন থাকায় অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষা বিভাগের নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত পাঠদানে অনীহা, জড়তায় ভুগছেন। সদর এবং আশপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এরকম কিছু বিদ্যালয় ব্যতিত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের দূরবর্তী হাওর এলাকার সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শুধুমাত্র হাজিরা পালনে বিদ্যালয়ে গমন করছেন এবং কিছু সময় অবস্থান করে নানা রকম অজুহাতে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন প্রতিনিয়ত। হাওর এলাকার লোকমুখে অহরহ বলতে শোনা যায়, বিদ্যালয়ে তাদের (শিক্ষক) মন বসে না, বিদ্যালয় ভালো লাগে না, সহ্য হয় না। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে হাজিরা দিয়েও শিক্ষকরা ছটফট করেন কখন ছুটি দিয়ে চলে যেতে পারবেন। বিশেষ করে ফেনারবাঁক ইউনিয়ন এবং বেহেলি ইউনিয়নের দূরবর্তী বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবনতা বেশি। সেসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার আগে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারেন না। তাছাড়া বেলা ২টা থেকে আড়াইটা বাজার সাথে সাথেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে তড়িঘড়ি করে উপজেলা সদরে ফিরে আসেন। ক্রমেই শিক্ষকদের বিদ্যালয় ফাঁকি দেওয়ার এই প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেক শিক্ষক আছেন দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে আসছেন। নিজেদের মর্জি মাফিক বিদ্যালয়ে যাওয়া -আসা এবং জবাবদিহিতার বাধ্য -বাধকতা না থাকায় এরকম অরাজক পরিস্থিতি একটা নিয়মে পরিণত হয়ে পড়েছে বলে অভিভাবক মহলের ক্ষুব্ধ অভিমত। অভিভাবকমহল আরো জানান, মনিটরিং কর্মকর্তার স্বল্পতা থাকায় মনিটরিং ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে আছে। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন কতিপয় ফাঁকিবাজ শিক্ষক। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে “এ” ক্যাটাগরির ১২টি, এবং “বি” ক্যাটাগরির ৫২টি, বাকিগুলো “সি” ক্যাটাগরি। ভর্তি থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজারের অধিক। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে প্রত্যক্ষ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশংকাজনক হারে কমে গেছে। ঝরে পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি স্বল্প। তাছাড়া এমনও অনেক বিদ্যালয় আছে যেখানে চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও মাতৃভাষায় বাংলা বানান বিশুদ্ধ ভাবে বলতে বা লিখতে পারে ন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ায়
ক্লাসরোমে আর শিক্ষকদের অফিস রোমে, বিদ্যালয় চত্বরে, কেবলই পিনপতন ভূতুড়ে নীরবতা বিরাজ করে প্রতিদিন। ফেলে আসা দিনগুলোতে বিদ্যালয়ের সরব আঙ্গিনায় শিশুদের কলকাকলি আর পঠন-পাঠনের সুমধুর আওয়াজ এখন আর শোনা যায় না। নিদারুণ ভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে শিক্ষার পরিবেশ এবং গুনগত মান। বিশেষ করে সদ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা অতি করুণ। রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়গুলো সরকারি করণের স্রোতের টানে সহজেই চাকুরিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শিক্ষানুরাগ নিয়ে তেমন কোন গরজ নেই বললেই চলে। রেজিস্টার থেকে সরকারি স্কেলে হঠাৎ বেতন ভাতা নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় সেই সকল শিক্ষকদের মাঝে একটা আয়েসি বিলাসি ভাব বিরাজ করে আসছে তৎসময় থেকে। তাদের না আছে সুশিক্ষার চর্চা, না আছে সময় জ্ঞান, নিয়ম-শৃঙ্খলা, আর না আছে দায়িত্ববোধ। এই থেকে উত্তরণের কোন পথই দেখছেন না চরম হতাশাগ্রস্থ অভিভাবকমহল। তাদের আক্ষেপ, শিক্ষকগণ হচ্ছেন সম্মানিত পেশাজীবী। তারা নিজে থেকে যদি দায়িত্ববান না হোন তবে শিক্ষার্থী প্রজন্মের জন্য তা হবে সীমাহীন দুঃখজনক। তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা বিভাগ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এটা অভিভাবকমহলের প্রত্যাশা। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রাব্বী জাহান জানান, শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মনিটরিং অব্যাহত আছে। আমাদের অগোচরে যদি কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে না যেয়ে থাকেন, অথবা দেরিতে যান, অথবা যথাযথ কোন কারণ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করে চলে আসেন, তবে আমাদেরকে তথ্য দিয়ে জানাবেন। কোন অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved © 2022 Todaysylhet24.com
Desing & Developed BY DHAKATECH.NET