শাহান আহমদ চৌধুরী: রাত পোহালেই বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ। নানা শঙ্কা, পরিবহন ধর্মঘট, পুলিশী ধরপাকড় সবকিছু চাপিয়ে ঐতিহাসিক আলিয়া মাদরাসা মাঠ জুড়ে পিকনিকের আমেজ। এই আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগর জুড়ে। শুক্রবার দিবাগত রাতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আলিয়ার মাঠ। ধর্মঘটের ভোগান্তি এড়াতে ২/৩ দিন আগেই শহরে পৌছঁতে শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে পুরো শহর ভরে যায় নেতাকর্মীতে। নগরীর সকল কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল, বোর্ডিং, আত্মীয় স্বজনের বাসা-বাড়ী আঙ্গিনায় ঠাই নেন আগত নেতাকর্মীরা।
এদিকে রাতেই সমাবেশস্থলে পৌছেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মাঠে চলছে মাইক, ব্যানার টানানো হয়েছে এবং মাঠের দুই পাশে দুটি ‘বড় পর্দা’ লাগানো হয়েছে। মাঠে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। বেশকিছু নেতাকর্মী একেকজন একেক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেকেই আছেন ফুরফুরে মেজাজে। আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে প্যান্ডেলে শ্লোগান, মিছিল আর গান বাদ্যের তালে মুখর। ছোট ছোট পিকআপ, মাইক্রোবাসে করে অন্যান্য জেলা থেকেও বিএনপি কর্মী সমর্থকরা এসে পৌঁছেছেন। সমাবেশস্থলে কাজী নজরুল ইসলামের রণ সঙ্গীত, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত ও দেশাত্মবোধক গানের তালে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তরুণ নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর সমাবেশস্থল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলটির কর্মীরা নেতাদের নামে, দলের বিভিন্ন ইস্যুতে শ্লোগান দিচ্ছেন।
মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারের আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মওজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড় ডেকচিতে হচ্ছে রান্নাবান্না। কেউ রান্না করেছেন সাদা ভাত, মাছ মাংস আবার কেউ রান্না করছেন খিঁচুড়ি। পরে দুপুরে নিজেদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে তারা।
এছাড়াও মাঠের প্রবেশমুখে ‘ডা. জোবায়দা রহমান ফ্রি ফুড ক্যাম্প’। এ ক্যাম্প থেকে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ব্যানার, ফেস্টুন-পোস্টারে ছেয়ে গেছে আলিয়া মাঠ : সমাবেশের একদিন আগেই ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শোভা পাচ্ছে পোস্টার-ফেস্টুন। দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, গত এক দশকে সিলেট নগরীতে এমন পোস্টার-ফেস্টুন শোভা পায়নি। দেয়ালে, গাছের ডালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, দোকানপাটে সাঁটানো হয়েছে এসব পোস্টার-ব্যানার। নেতাকর্মীরা বলছেন, নানা বাধার কারণে একদিনের সমাবেশ তিনদিনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। দু’দিন আগে থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নেয়া শুরু করেছেন। ক্ষণে ক্ষণে সরকারবিরোধী শ্লোগান নিয়ে মাঠে ঢুকছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। এদিকে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের থাকা খাওয়ার জন্য নগরের প্রায় সবকটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আলিয়া মাদরাসা মাঠে দেখা গেলো বিরল দৃশ্য। হাজার হাজার নেতাকর্মী স্লোগান দিচ্ছে, কেউ গান গাইছে। এ সব দৃশ্য দেখে কোন সমাবেশ ভাবার সুযোগ নেই। কারণ সর্বত্র বিরাজ করছে পিকনিকময় উৎসবের আমেজ।
Leave a Reply